Lycopodium (লাইকোপডিয়াম): ডা.এইচ.সি.এলেন

Lycopodium (লাইকোপডিয়াম)
#নিজস্বকথাঃ
১। ডানে অঙ্গে রোগাক্রমন বা প্রথমে ডান অঙ্গে ও পরে বাম অঙ্গে আক্রমণ।
২। গরম খাবারে স্পৃহা ও বায়ুর প্রকোপ।
৩। ভীরুতা, কৃপণতা ও নিঃসঙ্গপ্রিয়তা।
৪। অল্প খেয়ে ক্ষুধা মিটে যায়। সকল ক্ষেত্রে অম্লস্বাদ।
৫। তলপেটে বায়ু জমে উর্দ্ধভাগশীর্ণ নিম্নাংশ স্থূল।
#মূলকথাঃ
১। বিকালে ৪টা হতে ৮টায় বিশেষভাবে ৫টায় রোগের বৃদ্ধি।
২। রোগ ডান দিকে আরম্ব হয়ে বাম দিকে যায়।
৩। অন্ত্রে অতিরিক্ত বায়ু জমে, টক ঢেঁকুর, পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি।
৪। অত্যন্ত ক্ষুধা কিন্ত অল্প খেলেই পেট পূর্ণ হয়ে যায়, রাতে নিদ্রা ভঙ্গ হলে ক্ষুধা লাগার অনুভূতি।
৫। ধন্যবাদ দিলে কান্না করে, সকালে ঘুম ভাঙ্গলেই শিশুর মেজাজ অত্যন্ত খারাপ।
৬। প্রস্রাবে ইঁটের গুড়ার মত অথবা লাল বালির তলানি পড়ে।
৭। কোষ্ঠবদ্ধতার জন্য মনে হয় মলদ্বারে অনেক মল জমে আছে।
৮। গরম খাদ্য ও পানীয়ে উপশম ও ঠান্ডা খাদ্য ও পানীয়ে বৃদ্ধি।
# উপযোগিতাঃ
১। যাদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি অথচ দেহ দূর্বল, দেহের উপরভাগ শুকনো অথচ নিচেরদিক সামান্য শোথগ্রস্ত অর্থাৎ হাত-পা নূলো নূলো কিন্তু পেট-কোমর ভারী। যারা যকৃত ও ফুসফুসের রোগে ভোগে (ক্যাল্কে.কা, ফসফো, সালফ), জীবনের শুরু ও শেষভাগে অর্থাৎ শিশু ও বৃদ্ধদের অসুখে উপযোগী। কঠিন, ক্রমবর্ধমান পুরাতন রোগে উপযোগী।
২। ব্যথা-যন্ত্রণা: ঘিনঘিনে, চাপমত, টেনে ধরার মত- প্রধানতঃ ডানদিকে আক্রমন হয়। ব্যথা-যন্ত্রণার কষ্ট বিকাল ৪টা হতে রাত ৮টার মধ্যে বেড়ে যায়। শরীরের ডানদিক আক্রান্ত হয় বা ব্যথা-যন্ত্রণা ডানদিক হতে বামদিকে যায়- গলা, বুক, পেট, যকৃত ও ডিম্বাশয় আক্রান্ত হলে ঐ লক্ষণ থাকে।
৩। শিশু দূর্বল, দেহ শুকিয়ে যায়- মাথাটি সুন্দরভাবে পুষ্ট অথচ দেহ ছোট ও রুগ্ন। শিশু সারাদিন কাঁদে অথচ সারারাত ঘুমায় (জ্যালাপা ও সোরিনামের বিপরিত)।
৪। ভয়, রাগ, অপমান অথবা পূঞ্জীভূত অসন্তোষ হয়ে বিরক্তিভাব তা থেকে রোগ হলে (স্ট্যাফি) প্রযোজ্য। টাকা পয়সার খুব লিপ্সা, লোভী ও কৃপন প্রকৃতির, অন্যের ক্ষতি করার ইচ্ছা, মনের উদারতা বা দৃঢ়তা নেই, ভীরু প্রকৃতির- এসব লক্ষণে ব্যবহার্য।
৫। মেজাজ খিটখিটে, ঘুম থেকে জেগে উঠলে মেজাজ খিটখিটে ও বিরক্তি, মুখ বিকৃতি করে, লাথি মারে চিৎকার করে, একটুতেই রেগে যায়, বিরোধিতা বা প্রতিবাদ সহ্য করতে পারেনা, ঝগড়া বাধায়, রাগে আত্মহারা হয়ে পড়ে।
৬। সারাদিন কাঁদতে থাকে, কিছুতেই শান্ত হয়না, অত্যন্ত স্নায়ুবিক, ধন্যবাদ দিলেও কেঁদে ফেলে। ভয়, লোককে ভয় পায়, নির্জনতাকে ভয় পায়, একা থাকতে ভয় পায় (বিসমাথ, কেলি-কা, লিলি-টি)- এমন লোকদের অসুখে প্রযোজ্য।
৭। চামড়া ফ্যাকাসে, নোংরা, অপরিষ্কার, মলিনবর্ণ, চামড়ায় গভীর ভাঁজ পড়ে, বয়স অনুপাতে বয়ষ্ক দেখায়, নাকের পাখনা দুটো হাঁপড়ের মত উঠানামা করতে থাকে (এন্টি-টা)।রোগীর এক পা গরম অন্যটি ঠান্ডা (চায়না, ডিজি, ইপি)।
৮। সর্দি, শুকনো সর্দি, রাতে নাক বন্ধ হয়ে থাকে, মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে বাধ্য হয় (এমন-কা, নাক্স, স্রাম্বু), নাক ঝাড়তে থাকে। শিশু নাক ডলতে ডলতে ঘুম ভেঙে চমকে জেগে উঠে। নাকের গোড়ায় ও সম্মুখের সাইনাস (খুপরি) এর সর্দি। নাকে চটা ও চটচটে মামড়ি জমে (কেলি-বা, টিউক্রি)।
৯। ডিপথেরিয়ার লক্ষণ: গলার ভেতর বাদামি লালচে বর্ণের ঝিল্লী, ডানদিকের টনসিলে শুরু হয়ে বামদিকে বেড়ে যায়। বাম নাকে শুরু হয়ে নিচের দিকে ডান টনসিলে বেড়ে যায়। রোগলক্ষণ ঘুমের পর বেড়ে যায় ও ঠান্ডা পানি খেলে বেড়ে যায় (গরম পানিতে বাড়ে- ল্যাকে)।
১০। সবকিছুর আস্বাদ টক মনে হয়, টক ঢেকুর উঠে, বুক জ্বালা করে, গলা বেয়ে পানি উঠতে থাকে। টক বমি হয় (শীতভাব ও উত্তাপভাবের মাঝে হয়)।রাক্ষুসে ক্ষুধা, যত খায় ততই চাই- না খেতে পেলে মাথা যন্ত্রণা করে। রাতে ক্ষুধার্থ হয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে (সিনা, সোরিনাম)।
১১। হজমের উপসর্গ- অন্ত্রে প্রচণ্ড বায়ু জমে। পেট যেন ভর্তি সর্বদা এমনটা মনে হয়। ক্ষুধা খুবই আছে অথচ সামান্য খেলেই পেট ভরে যায় ও পেট ফুলে যায়। পেটে ভুটভাট শ্বদ হতে থাকে ও তলপেটে গড়গড় কোঁকোঁ শব্দ হয় (উপর পেটে- কার্ববেজ, সমস্ত পেটে- চায়না)। ঢেকুর তুললেও পেট খালি মনে হয় না (চায়না)।
১২। কোষ্ঠবদ্ধতা: মেয়েদের প্রথম ঋতুস্রাব শুরুর সময় থেকে, শেষ সন্তান প্রসবের পর থেকে, নিজের বাড়ী ছেড়ে অন্য কোথায় গেলে কোষ্ঠবদ্ধতা। শিশুদের কোষ্ঠবদ্ধতার সাথে নিষ্ফল মলবেগ, মলদ্বার সঙ্কুচিত হয়, মলত্যাগের সময় মলদ্বার বের হয়ে আসে, সেসাথে অর্শরোগের সৃষ্টি হয়। ডানদিকের হার্নিয়া (অন্ত্রবৃদ্ধি)
১৩। শিশু প্রস্রাব করলে কাঁথায় লাল বালুকণার মত তলানি পড়ে (ফসফো), প্রসাবের আগে শিশু করলে কাঁদতে থাকে (বোরাক্স)। পিঠে ব্যথা, ঐব্যাথা প্রসাব করলে কমে, কিডনী সংক্রান্ত ব্যথা ডানদিকে হয় (বামদিকে- বার্বারিস)।
১৪। ধ্বজভঙ্গ: হস্তমৈথুন ও অতিরিক্ত ইন্দ্রিয়সেবা করে যুবকদের ইন্দ্রিয় ছোট, ঠান্ডা ও শিথিল হয়ে পড়ে। বৃদ্ধদের মনে প্রচণ্ড সঙ্গমেচ্ছা কিন্তু লিঙ্গ শক্ত হয় না, সঙ্গম করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি বীর্যপাত হয়।
১৫। যোনিপথ শুষ্ক, সঙ্গমের সময় ও পরে যোনিপথে জ্বালা (লিসিন), যোনিপথে বাতাস বের হয়। প্রতিবার মলত্যাগের সময় জননেন্দ্রিয় হতে রক্তপাত হয়। পেটে ব্রুণ যেন ডিগবাজি খাচ্ছে বলে মনে হয়।
১৬। নিউমোনিয়া: অবহেলিত বা কুচিকিৎসিত- বিশেষত ডান ফুসফুসের নিচের দিক আক্রান্ত হয়, সেরাস ফ্লুইড শোষণ করতে ও শ্লেষ্মা তরল করে উঠিয়ে ফেলতে এ ঔষধ সাহায্য করে। কাশি যেন ভেতর থেকে উঠছে, ঘংঘং আওয়াজ হয়- বেশী পরিমাণে শ্লেষ্মা উঠলেও রোগী আরাম পায়না।
১৭। অনুপূরক- আয়োডিন। ক্যাল্কে.কার্ব, কার্বভেজ, ল্যাকেসিস, সালফারের পর ভাল খাটে। পেঁয়াজ, রুটি, মদ, তামাক খেয়ে তার কুফলে রোগ হলে (আর্স) ব্যবহার্য।
১৮। লাইকো দীর্ঘক্রিয় গভীরভাবে ক্রিয়া করে- উপকার দেখা দিলে পুনঃরায় প্রয়োগ কদাচিৎ প্রয়োজন হয়। সুস্পষ্ট লক্ষণ না পেলে প্রাচীন পীড়ার রোগীকে লাইকো দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে অন্য কোন এন্টিসোরিক ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিৎ।
১৯। বৃদ্ধি: প্রায় সবরোগেই বিকাল ৪টা হতে রাত ৮টার মধ্যে বাড়ে (হেলিবো)। (বেলা ৪টা হতে রাত ৭টা পর্যন্ত বৃদ্ধি- কলোসি, ম্যাগ-ফ।)।
২০। হ্রাস: গরম খাদ্য, গরম পানীয়, মাথা না ঢাকা দিলে, গায়ের জামা-কাপর ঢিলা করলে উপশম।