ARSENIC-ALB (আর্সেনিক এ্যাল্ব): ডা.আশরাফুল হক

(৩) আর্সেনিক এ্যাল্ব …………..
আজ একজন দুর্বল, শীর্ণ, সাংঘাতিক অস্থির, খুঁতখুঁতে, পরিষ্কার, কৃপণ, লোভী মানুষের গল্প শোনাবো। হ্যাঁ আর্সেনিকের গল্প।
আর্সেনিক-এ্যাল্বামে সাংঘাতিক শব্দটি যেন প্রধান কথা। তাই সাংঘাতিক শব্দটি দিয়ে আর্সেনিকের চিত্র আঁকার চেষ্টা করবো।
পশ্চিমবাংলার লিজেন্ড হোমিওপ্যাথ অধ্যাপক ডা. রবিন বর্মন স্যার রসিকতা করে আমার একটা পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন, ভবিষ্যতে “সাংঘাতিক” শব্দটি দিয়ে যেন একটা ওষুধের চিত্র আঁকি। তাই স্যারের সৌজন্যে একটু চেষ্টা করলাম মাত্র।
আকৃতি :
** সাংঘাতিক দুর্বল ও শীর্ণতা।
জিহ্বা :
** সাদা, বাদামি, লাল, কিনারা লাল, ডগা লাল, খাঁজপড়া, সাংঘাতিক ফাটলযুক্ত : (১ম গ্ৰেড)।
** সাংঘাতিক শুষ্ক, পঁচাস্বাদ, বিস্বাদ, তিতা স্বাদ।
মূল কথা :
** এরা পৃথিবীকে সাংঘাতিক সংঘাতময় ও হুমকিপূর্ণ মনে করে, তাই যা কিছু ক্ষতিকর বা স্বাস্থ্যহানিকর তা এড়িয়ে চলে।
** সাংঘাতিক বিচার-বিশ্লেষণ করে চলে।
বিশেষ কথা :
** সাংঘাতিক জ্বালা, শরীরের সর্বত্রই বিশেষত আক্রান্ত স্থানে সাংঘাতিক জ্বালা। আগুনের মত জ্বালা।
** সাংঘাতিক দুর্গন্ধ : মলমূত্র, শ্বাসপ্রশ্বাস সবকিছুতেই দুর্গন্ধ। যেখানে দুর্গন্ধ নাই সেখানে আর্সেনিক হবেনা।
** সাংঘাতিক পিপাসা কিন্তু বারবার অল্প পরিমাণে জলপান করে। মনে করে অনেক জলপান করবে কিন্তু সামান্য জলপানে পিপাসা মিটে যায়। তবে চিররোগে পিপাসা তেমন থাকে না।
** সাংঘাতিক ক্ষতিকর সময় :
দুপুর ১২টা – ৩টা, কিংবা রাত ১২টা – ৩টা। এ সময় তার রোগলক্ষণ বৃদ্ধি হয়।
ঐ সময়ে হঠাৎ :
** সাংঘাতিক মৃত্যুভয়, কান্নায় চোখ ভিজে যায়। ছটফটানি, অস্থিরতা। শারীরিক অস্থিরতার চেয়ে মানসিক অস্থিরতা বেশি।
** অন্ধকারে সাংঘাতিক মৃত্যুর ভয়। একা থাকতে পারে না মরে যাওয়ার ভয়ে।
** সাংঘাতিক যন্ত্রণায় রোগীর অবস্থা করুণ হয়ে পড়ে। মনে হয় এখনই দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে, ভাবে ডাক্তার দেখিয়ে লাভ নাই কারণ আর বাঁচবে না, সান্ত্বনায় ক্ষান্ত হয় না।
** সাংঘাতিক ভীতিপূর্ণ উৎকণ্ঠা, যন্ত্রণাদায়ক ভয়, ভয়ে অস্থিরতা, কাঁপুনি, ঘাম।
** সাংঘাতিক অসহিষ্ণু, ঠান্ডায়, গরমে বা যে কোনো বিষয়ে অসহিষ্ণু।
** সাংঘাতিক প্রচণ্ডতা ও উত্তেজনা প্রবণ :
নিজেকে আঘাত করে, মহিলা রোগী চুল টেনে ছিঁড়ে। নখ কামড়ায়, মনে হয় কাউকে খুন করবে। সহজেই উত্তেজিত হয়।
** সাংঘাতিক অনুভূতিপ্রবণ : ব্যথা, রোগ ও স্পর্শে অনুভূতিপ্রবণ।
** সাংঘাতিক অবিরাম চিন্তা ও দুর্ভাগ্যের বিষয় কাল্পনিক চিন্তা। কেউ কাছে না থাকলে যেন সময় কাটেনা।
** সাংঘাতিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন : শরীর, পোশাক বা বাহ্যিক ভাবে পরিষ্কার, ফিটফাট ওভার স্মার্ট। সবকিছু সাজানো গোছানো রাখতে চাই। নোংরা, অগোছালো দেখতে পারে না। সবকিছু ফিটফাট, পরিষ্কার না থাকলে অস্বস্তিও বিরক্তি বোধ করে।
** সাংঘাতিক খুঁতখুঁতে ও নোংরা মন। পরের দোষ ধরা স্বভাব, সহজে কারও কোন কাজ পছন্দ হয় না। সন্দেহপ্রবণ, প্রতিশোধ পরায়ন, হিংসুক, রাগ হলে মুখের উপর জবাব দেয়।
** সাংঘাতিক পরিষ্কার ও খুঁতখুঁতে স্বভাবের লক্ষণটিতে আরও যে সকল ওষুধের সাথে এর মিল আছে তার মধ্যে সিপিয়া, নাক্স-ভম, গ্রাফাইটিস, এনাকার্ডিয়াম, পালসেটিলা, নেট্রাম-মি, লাইকো, ক্যাল-কার্ব, ও কার্সিনোসিন ইত্যাদি।
** সাংঘাতিক নিরাশ, রোগ আরোগ্যের ব্যাপারে।
** সাংঘাতিক মনোকষ্টের কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়ায়।
** সাংঘাতিক সাবধানী, ফলে অপরিচ্ছন্ন খাবার খায় না।
** সাংঘাতিক ক্যান্সার রোগের ভয়।
** সাংঘাতিক স্বার্থপর, কৃপণ ও অর্থলোভী : স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের অর্থের ব্যাপারে এতটা অবিশ্বাস করে যে, তাদের ভয়ে টাকা লুকিয়ে রাখে। এরা শুধু নিতে জানে, দিতে জানে না। বন্ধু-বান্ধবের সাথে হোটেলে খাবে কিন্তু বিল দিবে না।
** আর্সেনিকের শিশুরা কান্নাকাটি করলে, কোলে নিয়ে জোরে চলাফেরা করলে কান্না থেমে যায়। ধীরে চলাফেরা করলে কান্না থামে না। কারণ আর্সেনিকের রোগের গতি সাংঘাতিক দ্রুত।
** আর্সেনিক ঘোড়ার মতো সাংঘাতিক অস্থির।
** এন্টিম-ক্রুড হায়েনার মতো সাংঘাতিক উগ্র।
** পালসেটিলা মেষ এর মতো সাংঘাতিক শান্ত।
** সাংঘাতিক শীতকাতর।
** চিররোগে মানসিক অস্থিরতা বেশি থাকলেও শারীরিক অস্থিরতা তেমন থাকে না। কারণ শরীর সাংঘাতিক দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শারীরিক অস্থিরতা দেখানোর মতো শক্তি থাকে না।
** খাদ্যের গন্ধ সাংঘাতিক অসহ্য : অচির রোগে খাদ্যদ্রব্যের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ফলে খেতে পারে না।
** সাংঘাতিক গুরুত্ববাহী লক্ষণ : প্রচুর ঘাম, ঠান্ডা ঘাম, ঘামে বৃদ্ধি : (১ম গ্রেড)।
** সাংঘাতিক দুর্গন্ধসহ ভুক্তদ্রব্যযুক্ত মল।
** মাথাব্যথা ছাড়া প্রায় সকল রোগে, গরম প্রয়োগে উপশম লক্ষণে ইহা সাংঘাতিক কার্যকরী ওষুধ।
** ঠান্ডা বাতাস সাংঘাতিক অসহ্য হলেও মাথা ব্যথায় ঠান্ডা পানি, ঠান্ডা বা খোলা বাতাস ভালো লাগে।
** সাংঘাতিক নিদ্রাহীনতা, ঘুম ঘুম ভাব।
** সাংঘাতিক ব্যথা : ছুরি দিয়ে কাটার মতো অসহ্য, কষ্টকর ব্যথা।
** সাংঘাতিক ক্ষুধা বা ক্ষুধাহীনতা।
** সাংঘাতিক ইচ্ছা : মিষ্টি, গরম খাবার, গরম পানীয়।
** সাংঘাতিক অসহ্য : ঠান্ডা খাবার, ফল, তরল খাবার, খারাপ মাংস। বাসি-পচা খাবার খেয়ে পেট খারাপ বা বদহজমে মন্ত্রের মতো কাজ করে।
** সাংঘাতিক ভীতিকর স্বপ্ন : দুর্ঘটনা, উৎকণ্ঠাকর, মৃতব্যক্তি, কষ্টকর অবস্থা, ভীতিকর স্বপ্ন : (১ম গ্রেড)।
** আর্সের ক্রিয়া কখনো সাংঘাতিক ধীর কখনো বা দ্রুত।
** হোমিও দর্শন অনুযায়ী সাইকোসিস মনকে সাংঘাতিক কলুষিত করে। চুরি-ডাকাতি, আপন জনের সাথে সম্পর্ক না রাখা, কৃপণতা, হিংসা সবই সাইকোসিস।
আর এ সব দোষ থুজা ও নেট্রাম-সালফের মতো আর্সেনিকেও আছে। ফলে অনেক সময় সাইকোসিসের উপর ইহা সুন্দর কাজ করে।
ওষুধের মূল লক্ষণসমূহ ওষুধের নামের মধ্যে অন্তর্নিহিত যথা :
ARSENIC-ALB.
A : Anxiety : উদ্বেগ :
R : Restlessness : অস্থিরতা:
S : Selfish : স্বার্থপর :
E : Exhaustion mental : খুব মানসিক ক্লান্তি :
N : Neat : পরিচ্ছন্ন :
I. : Impulsive : আবেগপ্রবণ :
C : Capricious : চঞ্চল :
A : Answer shortly : সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় :
L : Loathing life at : জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা :
B : bites, finger nails, habit of : আঙ্গুলের নখ কামড়ানো অভ্যাস :
** উৎস : খনিজ :
** ধরণ : ব্যক্তিলক্ষণ কেন্দ্রিক, পলিক্রেস্ট, অচির ও চিররোগের ওষুধ।
** কাতরতা : শীতকাতর।
** মায়াজম : সোরা ++ সিফিলিস ++ সাইকোসিস ++ টিউবারকিউলোসিস +++
আক্রান্ত দিক : শরীরের উপর অংশ বামদিক ও নিচের অংশ ডানদিক। ডান থেকে বাম কিংবা বাম থেকে ডানদিক আক্রান্ত হয়।