হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ঔষধ এবং চিকিৎসা জানুন

ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু)
=======================
প্রারম্ভিক : বহুভাষাবিদ, রসায়নবিদ (রসায়নশাস্ত্রের চূড়ামণি), তৎকালীন চিকিৎসা পদ্ধতি (Western Medicine নামে অভিহিত) এর উপর (১৭৭৯ খ্রি.) এনলার্জেন বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি ডক্টর অব মেডিসিন (এম.ডি) ডিগ্রিধারী, ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের ১ম প্রকাশিত কালজয়ী গ্রন্থ Organon der rationellen Heilkunde নামে গ্রন্থে Western Medicine পদ্ধতিকে “অ্যালোপ্যাথি” নামে (১৮১০ খ্রি.) নামকরণকারী জার্মানীর ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (জন্ম : ১৭৫৫ খ্রি.- মৃত্যু : ১৮৪৩ খ্রি.) তিনি ১৭৯৬ খ্রি. হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল সায়েন্স আবিস্কার করেন।
ধর্ম ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে দিগ্বিজয়ী প্রতিভাবান যারা জন্মগ্রহণ করেন, পরম হিতকর আবিষ্কারাদি যাদের জীবনব্যাপী প্রাণপণ গবেষণার ফল বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। তাদের প্রায় সকলেই প্রারম্ভে লাঞ্জিত, উপেক্ষিত, অপমানিত, এমনকি তীব্রভাবে উৎপীড়িত হয়েছেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিমান (জন্ম : ১৭৫৫ খ্রি. – মৃত্যু : ১৮৪৩ খ্রি.) তাদের মধ্যে একজন অন্যতম উদাহরণ।
হোমিওপ্যাথি তত্ত্বঃ
============
হিপোক্র্যাটস্ (গ্রিক দার্শনিক, গ্রিস) কে সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তার জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ খ্রিষ্টপূর্ব (৪৬০-৩৭৭)। হিপোক্র্যাটস্ প্রবর্তিত চিকিৎসা সংবিধানে দুইটি পদ্ধতি পরিস্ফুট ছিল। যথা-
(১) রোগ নিরসনের বিপরীত ধর্মী বস্তুর দ্বারা চিকিৎসা করা।
[এটাই পরবর্তিতে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. গ্যালেন (১২৯-২০০, গ্রিস) গ্রহণ করেন]
(২) প্রাকৃতিক ব্যাধি সদৃশ লক্ষণ উৎপাদক ক্ষমতা সম্পন্ন দ্রব্যের দ্বারা রোগীর চিকিৎসা করা।
[পরবর্তিতে এটি অনেক বছর পর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিমান (১৭৫৫-১৮৪৩, জার্মান) গ্রহণ করেন]
হিপোক্র্যাটস্ ২য় মতটির প্রতি সর্ব প্রথম সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী প্যারাসেলসার্স (জন্ম১৪৯৩ মৃত্যু১৫৪১ খ্রি., সুইজারল্যান্ড)।
হোমিওপ্যাথিতে মাত্রা তত্ত্ব/মাত্রা বিজ্ঞান/ঔষধ শক্তিকরণ নীতিঃ
================================
লর্ড বেকনের প্রবর্তিত বৈজ্ঞানিক গবেষণার আরোহনীতি এবং আধুনিক বিজ্ঞানের জনক স্যার আইজ্যাক নিউটন এর আবিষ্কৃত ৩য় গতি সূত্রের উপর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক সূত্রটির সমতুল্য। গতি সূত্রটিঃ “প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত ধর্মী প্রতিক্রিয়া আছে।” (Action and reaction are equal and opposite)
হ্যানিমান শক্তিকরণে আনেন যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন- স্থুল মাত্রার চেয়ে সূক্ষ্ম মাত্রাতেই ঔষধের আরোগ্যকারী ক্ষমতা অধিক নিহিত। এরুপে ঔষধের মাত্রার পরিমাণ কমাতে গিয়ে হ্যানিম্যান শক্তিকরণ বা Principle of Potentization আবিষ্কার করেন।
বিজ্ঞানী ডালটন এর মতে- পদার্থকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যে সূক্ষ্মতম স্তরে উপণীত হওয়া যায় তা পারমাণবিক স্তর (Atomic)।
তার ধারণা পরমাণু (Atom) অবিভাজ্য। এই অখন্ডনীয় পরমাণুর সমন্বয়ে পদার্থ গঠিত হয়। প্রত্যেক পরমাণু এক একটি শক্তিকেন্দ্র।
বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম ব্রকস পরীক্ষা করে প্রমাণ করেন যে, পরমাণুকে বৈদ্যুতিক শক্তির দ্বারা আরও সূক্ষ্ম অংশে বিভক্ত করা যায়। হোমিওপ্যাথি শক্তিকরণে তিনটি সত্য প্রকট-
(১) বিভাজিত ঔষুধ যতো সূক্ষ্ম হোক-না-কেন তার জড় পদার্থ অবিনশ্বর থাকবে।
(২) ঔষধ যতো বেশি সূক্ষ্ম হবে ততোবেশি শক্তিশালী হবে।
(৩) বাঞ্জিত শক্তি লাভের প্রয়োজনে ঔষধ ইচ্ছামত বিভাজিত করা যায়।
মাত্রা বিজ্ঞানে (হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানে) হ্যানিমানের অভিনব নীতি এক বিস্ময়কর উন্নয়ন। এই অাবিষ্কার না হলে ব্যর্থতার কারণে হোমিওপ্যাথি আরোগ্যনীতি বহুকাল আগেই লোকে ভুলে যেতো।
বিজ্ঞানী ডালটনের ও বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম ব্রকস- এর উক্ত সূত্রে শক্তিকরণকৃত বিশ্বে সর্বপ্রথম মানব দেহে ব্যবহার উপযোগী ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে একমাত্র তৈরিকৃত “হোমিওপ্যাথি ঔষধ” অন্যান্য প্যাথির (চিকিৎসায়) ঔষধ হতে রোগী বিনা কষ্টে ও বিনা অস্ত্রোপচারে (সার্জারি) যন্ত্রণাদায়ক রোগ হতে তুলনামূলক দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ আরোগ্য লাভের জন্য বিশ্বের অন্যান্য প্যাথির (চিকিৎসাশাস্ত্রে) “হোমিওপ্যাথি শক্তিকরণ” নীতি অনুসরণে ইনজেকশনসহ দরকারী ঔষধ তৈরি হচ্ছে।
হোমিওপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি আবিস্কারক ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যানঃ
=================================
হোমিওপ্যাথি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি। আজ থেকে দুইশত বছর পূর্বে জার্মান চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করেন। হোমিওপ্যাথি (homeopathy) ল্যাটিন শব্দ homeo -এর অর্থ সদৃশ বা একই রকম এবং pathy অর্থ ভোগান্তি বা অসুখ। তিনি হোমিওপ্যাথির মূলনীতিকে সংজ্ঞায়িত করেন এভাবে যে, “সদৃশ সদৃশকে নিরাময় করে” (Like cures like)। ল্যাটিন ভাষায় বলা হয় similia similibus curentur. অর্থাৎ যে ঔষধ সুস্থ শরীরে যে-রোগ সৃষ্টি করতে পারে, সেই ঔষধ অল্প মাত্রায় খাওয়ালে তা একই রোগ নিরাময় করতে পারে। পেশাগতভাবে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী একজন এলোপ্যাথিক ডাক্তার এবং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানসমুহের ইতিহাস নিয়ে যারা ব্যাপক পড়াশুনা করেছেন, তারা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, তিনি ছিলেন পৃথিবীতে আজ পযর্ন্ত জন্ম নেওয়া সর্বশ্রেষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন বিদ্রোহী এবং বৈপ্লবিক চিন্তাধারার প্রবর্তক। চিকিৎসা বিজ্ঞানকে তিনি বাণিজ্যের পযার্য় থেকে পূণরায় সেবার পর্যায়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিষ্কারক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান কেবল একজন শ্রেষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানীই ছিলেন না; একই সাথে তিনি ছিলেন মানব দরদী একজন বিশাল হৃদয়ের মানুষ, একজন মহাপুরুষ, একজন শ্রেষ্ট কেমিষ্ট, একজন পরমাণু বিজ্ঞানী, একজন শ্রেষ্ট চিকিৎসক, একজন অণুজীব বিজ্ঞানী, একজন শ্রেষ্ট ফার্মাসিষ্ট, একজন সংস্কারক, একজন বহুভাষাবিদ, একজন দুঃসাহসী সংগঠক, একজন অসাধারণ অনুবাদক, একজন নেতৃপুরুষ, একজন বিদগ্ধ লেখক, একজন সত্যিকারের ধার্মিক ব্যক্তি, একজন পরোপকারী-ত্যাগী মানব, একজন সুযোগ্য শিক্ষক, একজন আদর্শ পিতা, একজন রোমান্টিক প্রেমিক।
আজ থেকে দুইশত বছর পূর্বে হ্যানিম্যানের সময় চিকিৎসা বিজ্ঞান এতই জঘন্য এবং বর্বরতায় পুর্ণ ছিল যে, হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারকে কশাইখানা বলাই যুক্তিযুক্ত ছিল। সেখানে রোগীদেরকে রাখা হতো ভিজা এবং গরম কক্ষে, অখাদ্য-কুখাদ্য খেতে দেওয়া হতো, দৈনিক কয়েকবার রোগীদের শরীর থেকে রক্ত বের করে ফেলে দিয়ে দুর্বল করা হতো, রোগীদের শরীরে জোঁক লাগিয়ে (Leeching), সিঙ্গা লাগিয়ে (cupping) অথবা রক্তনালী কেটে রক্তপাত করা হতো, পায়খানা নরম করার ঔষধ (purgatives) খাওয়ানোর মাধ্যমে অনেক দিন যাবত রোগীদের পাতলা পায়খানা করানো হতো, বমি করানো হতো ইত্যাদি ইত্যাদি। সিফিলিসের রোগীদের প্রচুর মার্কারী খাওয়ানোর মাধ্যমে লালা নিঃসরণ (salivation) করানো হতো এবং এতে অনেক রোগীই কয়েক বালতি লালা থুথু আকারে ফেলতো এবং অনেক রোগীর দাঁত পযর্ন্ত পড়ে যেতো। অধিকাংশ রোগী (চিকিৎসা নামের) এই কুচিকিৎসা চলাকালীন সময়েই মারা যেতো। শরীরের মাংস অর্থাৎ টিস্যুকে গরম লোহা অথবা বাষ্প দিয়ে পুড়ানো হতো (cauterization), গরম সুঁই দিয়ে খুচিয়ে চামড়ায় ফোস্কা ফেলা হতো (blistering), লাঠি অথবা পাথরের আঘাতে শরীরে কৃত্রিম ফোঁড়া-ঘা-ক্ষত সৃষ্টি করা হতো এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঘা-ক্ষত মাসের পর মাস বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হতো। মানসিক রোগীদেরকে শিকলে বেধে রাখা হতো, নিষ্টুরভাবে লাঠি দিয়ে তাদেরকে প্রহার করা হতো, কাঠি দিয়ে খোঁচানো হতো, বালতি দিয়ে তাদের শরীরে ঠান্ডা নিক্ষেপ করা হতো এবং আত্মীয়-স্বজনরা দেখতে এলে তাদেরকে জংলী-জানোয়ারের মতো শিকলে বেধে টেনে হিচরে বাইরে এনে দেখানো হতো। উপরে বর্ণিত সকল কিছুই করা হতো মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা বা রোগমুক্তির নামে (যা আজকের দিনে কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে কল্পনারও বাইরে)।
১৭৯০ খ্রি. থেকে ১৮৪৩ খ্রি. হ্যানিম্যানের মৃত্যু পযর্ন্ত এই দীর্ঘ সময়ে তিনি হোমিওপ্যাথির মুল সুত্রগুলি (aphorism) আবিষ্কার করেছেন, আরো গবেষণা-পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পর্যায়ক্রয়ে তাদেরকে সংশোধন-পরিবধন-পরিবর্তন করেছেন, ঔষধ আবিষ্কার করেছেন, ঔষধের মাত্রাতত্ত্ব (posology) আবিষ্কার করেছেন, ঔষধের শক্তিবৃদ্ধি (potentization) করার প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন, জটিল (chronic) রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, রোগীদের শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি (miasm theory) আবিষ্কার করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁর সমস্ত আবিষ্কারকে তিনটি মৌলিক পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে গেছেন এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বিভিন্ন সংশোধনীর পর অনেকগুলি এডিশন বের করেছেন। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকরূপে বিবেচ্য এই বইগুলো হলো- অর্গানন অব মেডিসিন (Organon of Medicine), মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা (Materia Medica Pura) এবং ক্রনিক ডিজিজ (Chronic disease)। তাছাড়া লেসার রাইটিংস (Lesser writings) নামে তাঁর আরেকটি মৌলিক গ্রন্থ বিদ্যমান আছে যাতে তাঁর ছোট ছোট সমস্ত গবেষণা প্রবদ্ধগুলি সংকলিত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মানব স্বাস্থ্য সেবায় হোমিওপ্যাথিঃ
=============================
একজন হোমিওপ্যাথিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মানবজাতির প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তার এক বিরাট রহমত স্বরূপ। কেননা তিনি ইচ্ছে করলে মাত্র অল্প টাকায় ঔষধে এমন অনেক জটিল রোগ সারিয়ে দিতে পারেন, যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে লক্ষ টাকার ঔষধেও সারানো যায় না। হোমিওপ্যাথি ঔষধে আজ থেকে দুইশত পুর্বেও এমন অনেক রোগ-ব্যাধি সারানো যেতো যা এখনও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিরাময় করা যায় না। এমন অনেক জটিল রোগ আছে যা এক ফোটা হোমিওপ্যাথি ঔষধে সারিয়ে দেওয়া যায় অথচ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে এসব রোগের জন্য যুগের পর যুগ ঔষধ খেয়ে যেতে হয়। সে যাক, প্রথমকথা হলো হোমিওপ্যাথি পৃথিবীর একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি যা শতকরা একশ ভাগ বিজ্ঞান সম্মত। পক্ষান্তরে অন্যান্য বহুল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিসমুহের কোনটিই শতকরা একশভাগ বিজ্ঞানসম্মত নয়। এদের কোনটিতে বিজ্ঞান আছে দশ ভাগ আর বিজ্ঞানের নামে গোজামিল আছে নব্বই ভাগ আবার কোনটিতে বিজ্ঞান আছে বিশ ভাগ আর বিজ্ঞানের নামে ভাওতাবাজি আছে আশি ভাগ। একমাত্র শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত হওয়ার কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সকল রোগই সম্পূর্ণ নির্মুল হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোন রোগই নির্মুল হয় না বরং কিছু সময়ের জন্য চাপা পড়ে যায়। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট-খাটো রোগ চাপা পড়ে কিছু দিন পর বড় বড় রোগে রূপান্তরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। সে-সব চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডায়েরিয়ার চিকিৎসা করলে কোষ্টকাঠিন্য/ পাইলস দেখা দেয়, চর্মরোগের চিকিৎসা করলে হৃদরোগ, বাতের চিকিৎসা করলে ক্যান্সার, মানসিক রোগের চিকিৎসা করলে ব্রেন ড্যামেজ, আলসারের চিকিৎসা করলে ধ্বজভঙ্গ ইত্যাদি ইত্যাদি। আরেকটি অসুবিধা হলো প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির ঔষধে মারাত্মক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যেখানে সম্পূর্ণ শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত হওয়ার কারণে হোমিও ঔষধের ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম; একেবারে নাই বললেই চলে।
হোমিওপ্যাথি স্বাস্থ্য শিক্ষাঃ
=================
নতুন প্রজন্মের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের হোমিওপ্যাথিকে পেশা হিসেবে গ্রহন করার আহ্বান জানাই। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো শতভাগ বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি হওয়ার কারণেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান খুবই জটিল যা একজন গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া ছাত্র-ছাত্রী ব্যতীত অন্যদের পক্ষে ভালোভাবে আয়ত্ব করা সম্ভব নয়। অথচ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কম মেধাসম্পন্নরা হোমিওপ্যাথিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কারণে উল্টো হোমিওপ্যাথির আরো বদনাম বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে সরকারীভাবে হোমিওপ্যাথিতে দুইটি কোর্স বিদ্যমান আছে। তার একটি হলো ডিপ্লোমা কোর্স এবং অন্যটি হলো ডিগ্রি কোর্স। ডিপ্লোমা কোর্সটি সারে চার বছর মেয়াদী এবং ডিগ্রি কোর্সটি ছয় বছর মেয়াদী। ডিপ্লোমা কোর্সটিকে বলা হয় ডি.এইচ.এম.এস. (D.H.M.S.- Diploma in Homoeopathic Medicine & Surgery) এবং ডিগ্রি কোর্সটিকে বলা হয় বি.এইচ.এম.এস. (B.H.M.S.- Bachelor of Homoeopathic Medicine & Surgery)। ডিপ্লোমা কোর্সের চার বছর হলো থিওরীটিক্যাল ক্লাস এবং ছয় মাস হলো হাসপাতালে ইন্টার্নী ক্লাস। ডিএইচএমএস কোর্সকে আরও যুগোপযোগী করতে নতুন পাঠ্যপুস্তক অন্তভুক্ত করে পূর্ণমান বৃদ্ধি করে বর্তমানে পাঁচ বছর থিওরীটিক্যাল এবং এক বছর হাসপাতালে ইন্টার্নী ক্লাস করার প্রক্রিয়া চলছে। পক্ষান্তরে ডিগ্রি কোর্সে পাঁচ বছর হলো থিওরীটিক্যাল ক্লাস এবং এক বছর হলো হাসপাতালে ইন্টার্নী ক্লাস। ডিপ্লোমা কোর্সটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড (BANGLADESH HOMOEOPATHIC BOARD), ঢাকা এবং ডিগ্রি কোর্সটি পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ( of Dhaka).
সম্প্রতি বাংলাদেশের আশা ইউনিভার্সিটি ও বিবিসি-বাংলা এর গবেষণা প্রতিবেদন ২০১৫ খ্রি. বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০% জনগন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছে।
বাংলাদেশে এমবিবিএস’রা হোমিওপ্যাথি কোর্স করছে :
====================================
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক এম.বি.বি.এস (অ্যালোপ্যাথি) সন্মানীত ডাক্তারগণ শুধুমাত্র ডি.এইচ.এম.এস (হোমিওপ্যাথি) কোর্স করতে পারেন। অনেকে করেছেন ও করছেন এবং কোর্স করে হোমিওপ্যাথি প্র্যাকটিস করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সিলেটে জন্মস্থান ও ঢাকায় বসবাসকারী যার পরিবারের স্ত্রী সন্তান সহ সকলেই অ্যালোপ্যাথি উচ্চ ডিগ্রিধারী তাদের মধ্যে
(১) ডা. শেখ ফারুক এলাহী।
এম.বি.বি.এস (সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ), এম.সি.পি.এস (মেডিসিন), এম.পি.এইচ (কমিউনিটি মেডিসিন), এম.ফিল (Med )….., ডি.এইচ.এম.এস (হোমিওপ্যাথি),
পি-এইচডি (চায়না)
প্রাক্তন রেজিষ্ট্রার, (Department of Obstetrics & Gynaecology) রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ। তার সন্তান
(২) ডা. ফাতেমা জোহরা।
পিতা- ডা. শেখ ফারুক এলাহী।
এম.বি.বি.এস পাস। ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) পাস। এমডি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।
(৩) শেখ মোহাম্মদ সানি।
পিতা- ডা. শেখ ফারুক এলাহী।
এম.বি.বি.এস (ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ। পাস ২০১৫), ডি.এইচ.এম.এস (হোমিওপ্যাথি)…।
(সহ পরিবারের অন্যান্যরা অ্যালোপ্যাথি এমবিবিএস সহ উচ্চ ডিগ্রিধারী হলেও বর্তমানে সকলে হোমিওপ্যাথি ডিএইচএমএস কোর্সকৃত ডাক্তার)
(৪) ডা. এম. ছবেদ আলী।
এমবিবিএস, ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি), বিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি)…।
(৫) ডা. এআরএম জামিল।
এমবিবিএস, ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি)…।
(বাংলাদেশে আরোও অনেক এমবিবিএস পাসকৃতরা হোমিওপ্যাথি কোর্স করছে ও করেছে এবং পেশা হিসাবে হোমিওপ্যাথকে গ্রহণ করেছে)