মানসিক রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নির্দেশিকা

মানসিক রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নির্দেশিকা (Common homeopathic Psychiatric medicines):-
আমরা শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ হলে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে চিকিৎসা করলে সবচেয়ে দ্রুত, আরামের সাথে আর কম খরচে সম্পূর্ণরূপে স্থায়ীভাবে রোগমুক্ত হতে পারব, তা ঠিক করতে প্রায়ই ভুল করে থাকি। সোজা কথায় শারীরিক বা মানসিক যে-কোন ধরণের রোগেই আমরা আক্রান্ত হই না কেন, প্রথমেই আমাদের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অবলম্বন করা উচিত। কেননা ঔষধের যাদুকরী শক্তি বলতে যা বোঝায়, তা কেবল হোমিওপ্যাথিক ঔষধেরই আছে। হোমিও চিকিৎসার ব্যর্থতার পরেই কেবল আমাদের সার্জারী বা অস্ত্রচিকিৎসার কথা স্মরণ করা উচিত।
মানসিক রোগের চিকিৎসায় প্রথমেই আমাদের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা অবলম্বন করা উচিত। কেননা মানুষের মনকে পরিবর্তন বা প্রভাবিত করার ক্ষমতা কেবল হোমিওপ্যাথিক ঔষধেরই আছে। এলোপ্যাথিক, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক প্রভৃতি ঔষধের মানুষের মনের উপর কোন ক্রিয়া করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, অধিকাংশ মানুষ মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে না গিয়ে বরং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের স্মরণাপন্ন হয়ে থাকেন। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমরা যাদেরকে জানি, তাদের সবাই এলোপ্যাথিক ডাক্তার। ওনারা খুবই মেধাবী, জ্ঞানী, গুণী, সুদীর্ঘ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইত্যাদি ইত্যাদি সবই সত্য। কিন্তু মানসিক রোগের চিকিৎসা করার মতো ঔষধ ওনাদের হাতে নাই। ফলে তাদের দৃষ্টান্ত অনেকটা “ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সরদার”-এর মতো। কেননা তাদের কোন ঔষধই মানুষের মনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় নাই। ফলে মানসিক রোগীদেরকে তারা কেবল মাথা ঠান্ডা করার ঔষধ (Tranquillizer) অথবা ঘুমের ঔষধ (Hypnotic) দিয়ে যুগের পর যুগ চিকিৎসা চালিয়ে যান।
আমাদের শরীরের একটি নিজস্ব শক্তিশালী রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে।এই কারণে অধিকাংশ ছোট-বড় শারীরিক রোগ বিনা চিকিৎসাতেই সেরে যায়। তেমনিভাবে অধিকাংশ মানসিক রোগও শরীরের নিজস্ব রোগ নিরাময় ক্ষমতার (immune system) বদৌলতে বিনা ঔষধেই সেরে যায়। মাঝখানে এসব ঘুমের ঔষধের (Sedative) সুনাম বেড়ে যায় । আকস্মিক মানসিক উত্তেজনা (anxiety) থেকে যে-সব মানসিক রোগ হয়, সে-সব রোগ কিছুদিন ঘুমের ঔষধ (sedative) খেলেই সেরে যেতে দেখা যায়। কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, যে-সব মানসিক রোগের মুল কারণ অনেক গভীরে প্রোথিত (miasmatic/ constitutional) ; সে-সব রোগ দীর্ঘদিন যাবত ঘুমের ঔষধ খাওয়ার ফলে ভালো তো হয়ই না, বরং নিশ্চিতভাবে আরোও খারাপের দিকে চলে যায়।
বিভিন্ন স্বনামধন্য চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্টানের গবেষণায় অনেক পুর্বে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, এসব মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধ/ ঘুমের ঔষধ আমাদের মস্তিষ্কের নিজেকে নিজে নিরাময় করার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এভাবে এসব ঘুমের ঔষধ আমাদের মস্তিষ্ককে স্থায়ীভাবে নষ্ট করে দেয় এবং তখন মানসিক রোগটি আর আরোগ্যের কোন আশাই থাকে না। বিষয়টি একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করছি। মনে করুন একজন সুস্থ সবল মানুষকে যদি একটি সুপারি গাছের সাথে দীর্ঘদিন এমনভাবে শক্ত করে বেধে রাখা হয় যে, সে এক ইঞ্চিও নড়তে চড়তে না পারে, তাহলে কি হবে ? হ্যাঁ, লোকটি মরে যেতে পারে আর যদি বেঁচেও যায়, তবে তার সারা শরীর অবশ (paralysis) হয়ে যাবে। সে আর জীবনে নড়তে-চড়তে পারবে না এবং তার স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারবে না। তেমনিভাবে এসব মাথা ঠান্ডার রাখার ঔষধ বা এসব ঘুমের ঔষধ আমাদের ব্রেনকে তার স্বাভাবিক কাজ করতে বাধা দেয় এবং ইহার ফলে দীর্ঘদিন আমাদের ব্রেন তার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ-কর্ম করতে না পারার কারণে সেও প্যারালাইসিস হয়ে যায় অর্থাৎ ব্রেনের কাজ করার ক্ষমতা স্থায়ীভাবে (চিরতরে) নষ্ট হয়ে যায় ।
তাই বলা যায়, এসব জটিল মানসিক রোগীদেরকে যদি বছরের পর বছর ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর পরিবর্তে বিনা ঔষধেও ফেলে রাখা হতো, তাহলেও দেখা যেতো শরীরের নিজস্ব রোগ নিরাময় ক্ষমতার বদৌলতেই এদের অধিকাংশই এক সময় রোগমুক্ত হয়ে যেতো। মানসিক রোগীদের চিকিৎসার নামে আমাদের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা জেনেশুনেই এভাবে তাদের সর্বনাশ করে থাকেন। আমাদের জানতে ইচ্ছে করে, এজন্য তারা কোন বিবেকের পীড়া অনুভব করেন কিনা ? হয়ত (হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে) অজ্ঞতার কারণে তাও তারা অনুভব করেন না ; হয়ত তারা ভাবেন আমরা আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি-অভিজ্ঞতা দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি ! এসব মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধের আছে আরো অনেক খারাপ-খারাপ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া যার কিছু কিছু জানা গেছে আর কিছু ভবিষ্যতে জানা যাবে।
১৯৬৪ সালে যখন এলোপ্যাথিক ঔষধ থেলিডোমাইড (Thalidomide) মার্কেটে আসে, তখন উৎপাদনকারী কোম্পানির পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছিল যে, এটি টেনশানের বা মাথা ঠান্ডা রাখার কিংবা নিদ্রাহীনতার জন্য এ যাবত কালের সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ ঔষধ। কিন্তু দুই বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে জানা যায় যে, যে-সমস্ত গর্ভবতী মহিলা থেলিডোমাইড খেয়েছেন, তারা হাত এবং পা বিহীন পঙ্গু, বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। পশ্চিম জার্মানীর স্বাস্থ্য বিভাগ একাই থেলিডোমাইড খাওয়ার ফলে দশ হাজার বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের ঘটনা রেকর্ড করেছিল। সত্যিকার অর্থে এটি ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য এবং নির্মম ঘটনা।
হোমিওপ্যাথিতে আছে মানসিক রোগ নিরাময়ের জন্য খুবই কার্যকর অগণিত ঔষধ যাদের বড় ধরণের কোন ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নাই। কিন্তু অজ্ঞতার কারণে লোকেরা মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য হোমিও ডাক্তারদের স্মরণাপন্ন হয় না। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা যদিও সামান্য ডান-বাম করে তাদের কিতাবে অগণিত মানসিক রোগের নাম আমদানী করেছেন ; কিন্তু মোটামুটি সকল মানসিক রোগের চিকিৎসায় সম্বল তাদের একটাই আর তা হলো মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধ (tranquillizer/ sedative/ hypnotic)।
তাদের কুড়ি পৃষ্টার রেকর্ডেও উচ্চতা, ওজন, অতীতে কি কি ঔষধ খেয়েছে ইত্যাদি ছাড়া রোগীর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কোন তথ্য পাবেন না। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে মানসিক রোগের পাশাপাশি রোগীর শারীরিক গঠন (constitution) এবং মানসিক গঠন (mental makeup) ও বিবেচনা করা হয়ে থাকে এবং পাশাপাশি উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের জীবনের আবেগময় অধ্যায়, প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ, পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যু বা তালাক, কোন অতিপ্রিয় পোষা প্রাণীর মৃত্যু, বিদ্যালয় পরিবর্তন করা, শিক্ষক বা অন্য কারো কর্তৃক অপমান-ভৎর্সনা, ব্যবসায়ে ক্ষতি বা চাকুরি হারানো, পরকাল নিয়ে অতিরিক্ত টেনশান ইত্যাদি ইত্যাদিকেও খুবই গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। তারপর কয়েক হাজার ঔষধ থেকে বেছে বেছে রোগীর জন্য সর্বাধিক উপযোগী একটি মাত্র ঔষধ নির্বাচন করা হয়।
অন্যদিকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীদেরকে এক সাথে অনেকগুলি ঔষধ দিয়ে থাকেন। ফলে কোন ঔষধটি কাজ করছে আর কোনটি কাজ করছে না তা তারা বুঝতে পারেন না এবং রোগের অবস্থা ভালোর দিকে যেতে থাকলে কখন ঔষধ বন্ধ করতে হবে এবং কোন ঔষধটি বন্ধ করতে হবে, তা ডাক্তারও জানেন না এবং রোগীও জানেন না । আসলে সে-সব মানসিক রোগের ঔষধ আদৌ বন্ধ করা সম্ভব হয় না ; বরং যত দিন যেতে থাকে ঔষধের মাত্রাও তত বাড়াতে হয় । একমাত্র মৃত্যুছাড়া সে-সব ঔষধ বন্ধ করা হয় না।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, যে-সব আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হয় (Reported suicides) তাদের শতকরা ৮০ ভাগই কোন না কোন মানসিক রোগের (এলোপ্যাথিক) ঔষধ খেতো এবং শতকরা ৫০ ভাগ বিষন্নতা রোগের ঔষধ (antidepressants) খেতো । প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে মানসিক রোগ নিরাময়ের জন্য ডাক্তাররা যে ঔষধ দিয়ে থাকেন, অনেক সময় রোগীরা সে-সব (ঘুমের) ঔষধ একসাথে অনেকগুলো খেয়ে আত্মহত্যা করে বসে। কিন্তু হোমিও চিকিৎসায় মানসিক রোগের জন্য ডাক্তাররা যে-সব ঔষধ দেন, সেগুলো একসাথে অনেক বেশী পরিমাণে খেয়েও কোন মানসিক রোগীর পক্ষে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়।
মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলো খুবই দামী ; এজন্য অনেককে গর্ব করে বলতে দেখা যায় যে, “জানেন, প্রত্যেক দিন এত এত টাকা ঔষধ খেতে হয় !”। আসলে “চকচক করিলেই সোনা হয় না” এই প্রবাদটি সবারই মনে রাখা উচিত। পক্ষান্তরে মানসিক রোগে ব্যবহৃত হোমিও ঔষধগুলোর মূল্য সেই তুলনায় অনেক অনেক কম ; এতে আপনার চিকিৎসা খরচ কমে যাবে একশ থেকে একহাজার ভাগ ।
মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলো দীর্ঘদিন খেলে নেশা (drug dependency) হয়ে যায় ; ফলে সেগুলো খাওয়া বাদ দেওয়া যায় না। কারণ সেই ঔষধগুলো খাওয়া ছেড়ে দিলে রোগটি পুনরায় বেড়ে যায় (withdrawal symptoms)। কিন্তু মানসিক রোগের হোমিও ঔষধগুলো দীর্ঘদিন খেলেও নেশা হয় না। মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলোর ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ; এগুলো আপনার ব্রেন, হার্ট, লিভার, কিডনীর বারোটা বাজিয়ে দিবে। কিন্তু মানসিক রোগের হোমিও ঔষধগুলো শরীরের কোন ক্ষতি তো করেই না বরং একই সাথে শরীরের জন্য ভিটামিনের কাজও করে দেয়।
প্রচলিত মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধগুলো (tranquillizer/sedative) মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে পযর্ন্ত হত্যা করে তাদেরকে নিছক রোবটে পরিণত করে ফেলে। যেমন- একজন মানসিক রোগী তার অভিজ্ঞতার কথা বলছিল এভাবে যে, “সিনেমা হল ভর্তি লোকেরা যখন একটি করুণ দৃশ্য দেখে কাদঁছিল, তখন আমি কাদঁতে পারছিলাম না। কেননা তখন আমি মানসিক রোগের সে-সব জনপ্রিয় ঔষধগুলো খাওয়ার ওপরে ছিলাম”। মানসিকভাবে সুস্থতার মানে কি আবেগ-অনুভূতির শূণ্যতা ?
হোমিওপ্যাথির জনক হ্যানিম্যান প্রমাণ করে গেছেন যে, শারীরিক কোন রোগের কুচিকিৎসাই হলো অধিকাংশ মানসিক রোগের মূল কারণ। মানসিক রোগের চিকিৎসাতে হোমিও ঔষধ সাধারণত উচ্চ শক্তিতে খাওয়ানো নিয়ম। তবে সংগ্রহে না থাকলে নিম্নশক্তিতেও খাওয়াতে পারেন। সাধারণত এক-দুই-তিন মাত্রা ঔষধ খাওয়ানোর পরেও যদি কোন পরিবর্তন না হয়, তবে বুঝতে হবে ঔষধ নিবার্চন ভুল হয়েছে। নতুন করে চিন্তা করে অন্য ঔষধ প্রয়োগ করুন।

#মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান প্রধান হোমিওপ্যাথিক ঔষধের নির্দেশিকা:-

(১) বেলেডোনা (Belladonna): মজার মজার বিষয় কল্পনায় দেখে বা শোনে, ভীষণ ক্রুদ্ধ, হিংস্র চাহনি, রক্তচক্ষু,আঘাত করা বা কামড়ানোর প্রবনতা, কল্পনায় দৈত্য-দানব, ভূ-প্রেত, পোকা-মাকড় ইত্যাদি দেখা, আলোকভীতি,ভীতিকর স্বপ্নের জন্য ঘুমাতে না পারা, মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চয় (অর্থাৎ নাক-মুখ-চোখ গরম বা লাল হয়ে থাকা) ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত মানসিক রোগে বেলেডোনা (Belladonna) ঔষধটি অব্যর্থ ঔষধ। ঠান্ডা পানিতে, ঠান্ডা বাতাসে, বরফ বা তুষারপাতের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার কারণে যদি কোন মানসিক রোগ হয়, তবে বেলেডোনা (Belladonna) হলো তার সঠিক ঔষধ।

(২) স্ট্র্যামোনিয়াম (Stramonium): প্রচণ্ড উন্মত্ততা, প্রলাপ, বকবকানি, অন্ধকারভীতি,পানিভীতি, মাথায় রক্তসঞ্চয়, নিঃসঙ্গতায় ভয়, পলায়ণপর ভাব, প্রচণ্ড ভীতিভাব ইত্যাদি লক্ষণে স্ট্র্যামোনিয়াম (Stramonium) ঔষধটি কাযর্করী।

(৩) হায়োসাইয়েমাস (Hyoscyamus): মানসিক অসুস্থতার সাথে অশ্লীল কথা, অশ্লীল গান বা অঙ্গভঙ্গি, গায়ের কাপড় ফেলে দেয়া বা যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করা, একা থাকতে ভয়, অন্যরা তাকে কামড়াবে বা বিষপ্রয়োগে হত্যার ভয়, কিছু দিলে নিতে অস্বীকার করা, সবাই তার বিরুদ্ধে চক্রান- করতেছে, পানিভীতি ইত্যাদি লক্ষণে হায়োসাইয়েমাস (Hyoscyamus niger) ঔষধটি অব্যর্থ।

(৪) এনাকার্ডিয়াম (Anacardium oriental): শারীরিক বা মানসিক ব্যাধির সাথে যদি সবাইকে সন্দেহ করার প্রবনতা, স্মরণশক্তি হ্রাস পায়, হিংসুটে ভাব, অযথা অভিসমপাত এবং মিথ্যা কসম খাওয়া, হাঁটার সময় মনে হয় কেউ তাকে অনুসরণ করছে, এখনই ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটবে এমন ভয়, অশরীরি কে যেনো তাকে আদেশ করছে এবং অন্যজন তাকে নিষেধ করছে,নিজের বা অন্যের উপর আস্থার অভাব ইত্যাদি লক্ষণে এনাকার্ডিয়াম (Anacardium oriental) যাদুর ন্যায় কাজ করে।

(৫) ল্যাকেসিস (Lachesis): কোন মানসিক রোগী যদি ধমীর্য় কথাবার্তা বেশী বলে (অর্থাৎ ইনশাল্লাহ, মাশায়াল্লাহ, সোবহানাল্লাহ, আল্লাহ, রাসুল, নামায, রোজা, বেহেশত, দোযখ ইত্যাদি), তবে তার রোগের নাম যা-ই হোক না কেন, তাকে উচ্চ শক্তিতে একমাত্রা ল্যাকেসিস (Lachesis) ঔষধটি খাইয়ে দিন। সে মুহূর্তে মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে। ল্যাকেসিস ঔষধটির আরেকটি প্রধান লক্ষণ হলো ইহার রোগীরা হিংসুটে হয়ে থাকে ; অর্থাৎ রোগীর কথা-বার্তায় যদি অন্যদের প্রতি হিংসা প্রকাশ পায়, তবে তাকে ল্যাকেসিস খাওয়াতে হবে।ল্যাকেসিসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো এদের শরীরে এনার্জি থাকে প্রচুর অর্থাৎ এরা অনেক পরিশ্রম করেও কাহিল হয় না।

(৬) ইগ্নেশিয়া (Ignatia amara): প্রেমে ব্যর্থতা, আপনজনের মৃত্যু, বিরহ, তালাক, চাকুতিতে বা ব্যবসায়ে লোকসান, ভীষণ মানসিক আঘাত ইত্যাদির কারণে কোন রোগ হলে প্রথমে ইগ্নেশিয়া (Ignatia amara) খাওয়াতে হবে। ইগ্নেশিয়া খাওয়ার পরেও যদি একশ ভাগ রোগমুক্তি না হয়, তবে অসমাপ্ত নিরাময় শেষ করার জন্য নেট্রাম মিউর (Natrum muriaticum) খাওয়া জরুরি। অর্থাৎ নতুন মনোকষ্টে ইগ্নেশিয়া এবং পুরনো মনোকষ্টের চিকিৎসায় নেট্রাম মিউর।

নেট্রাম মিউর (Natrum muriaticum):যৌনকর্মের পরে মন ভালো হয়ে গেলে নেট্রাম মিউর (Natrum muriaticum) খেতে হবে। পক্ষান্তরে যৌনকর্মের পরে মন খারাপ হয়ে গেলে সিপিয়া (Sepia) খেতে হবে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার জন্য- Natrum mur আর অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার জন্য- Argentum nitricum অব্যর্থ ঔষধ।

(৭) স্ট্যাফিসেগ্রিয়া (Staphisagria): ঝগড়া-ঝাটি, অপমান, ধর্ষন, তালাক, পিতা-মাতা-স্বামী-শিক্ষকের পিটুনি ইত্যাদির পরে কোন শারীরিক বা মানসিক রোগ হলে Staphisagria খান, আপনার শরীর-মন স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

(৮) মেডোরিনাম (Medorrhinum): শিশুদের মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টুমির জন্য Medorrhinum (পেট নীচে দিয়ে ঘুমায় এবং কমলা-চকোলেট খেতে বেশী পছন্দ করে) খাওয়ান।

(৯) লাইকোপোডিয়াম (Lycopodium): যে-সব শিশুরা ঘরের ভেতর স্বৈরাচারী কিন্তু বাইরে অতিশয় ভদ্রলোক তাদের জন্য লাইকোপোডিয়াম (Lycopodium) ঔষধটি খুবই ফলদায়ক।

(১০) ব্যাসিলিনাম (Bacillinum): কথায় কথায় ভাঙচুর বা ধ্বংসাত্মক আচরণে অভ্যস’, অল্পতেই ভীষণ ক্ষেপে যায়, কুকুরকে ভয় পায়, ভ্রমণ করা পছন্দ লক্ষণে Bacillinum (শক্তি ১০০০) মাসে একমাত্রা করে তিন মাস খান এবং দরকার হলে পরবর্তীতে শক্তি বৃদ্ধি করে খান। সাধারণত বিসিজি (BCG) টিকা নিলে শিশুরা খুবই দুষ্টু, স্বৈরাচারী স্বভাব পেয়ে যায় এবং ব্যাসিলিনাম হলো বিসিজির একশান নষ্ট করার সেরা ঔষধ ।

(১১) ট্যারেন্টুলা হিপ (Tarentula hispanica): চরমমাত্রায় অস্থিরতা, সর্বদা একটা না একটা কিছু করতেই হয়, নড়াচড়া ছাড়া থাকতে পারে না, এমনকি রোগীকে যদি দড়ি দিয়ে টাইট করে বেধেও রাখে তথাপি সে একটি আঙ্গুল হলেও নাড়াতে থাকবে, অপ্রয়োজনে চুরি করার স্বভাব ইত্যাদি লক্ষণে Tarentula hispanica ভালো।

(১২) প্ল্যাটিনাম মেট (Platinum metallicum): অহংকারী সুন্দরী নারী, নিজেকে খুব বড় মনে করা, নিজেকে ব্যতীত সবকিছু তুচ্ছ মনে করা, সাংঘাতিক রকমের যৌনউন্মাদ, ঘনঘন পুরুষ সঙ্গী পাল্টায়, কেউ কেউ দৈনিক বিশ-পঞ্চাশবার যৌনকর্ম করে ইত্যাদি লক্ষণে প্ল্যাটিনাম (Platinum metallicum) খাওয়াতে হবে।

(১৩) এসিড ফ্লোরিক (Acidum Fluoricum): পক্ষান্তরে কোন পুরুষের মধ্যে যদি মাত্রাতিরিক্ত যৌনশক্তি / যৌন উত্তেজনা থাকে, লুচ্চা স্বভাবের, রাস্তায় দাঁড়িয়ে মহিলাদের উত্যক্ত করতে থাকে, শরীরের প্রচুর শক্তি, অনেক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করেও দুর্বল লাগে না ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে এসিড ফ্লোরিক (Acidum Fluoricum) খাওয়াতে হবে।

(১৪) ক্যানাবিস ইন্ডিকা (Cannabis indica): গাজা খাওয়ার পরে মনে যেমন স্ফূর্তির ভাব হয়, তেমন মানসিক অবস্থায় অথবা মানসিক হীনমন্যতার (inferiority complex) জন্য Cannabis indica খাওয়ান।

(১৫) আর্সেনিক এল্বাম (Arsenic album): অত্যন্ত অস্থিরতা, অতীব মৃত্যুভয়, আমার রোগ কখনও ভালো হবে না, মৃত্যু নিশ্চিত ইত্যাদি লক্ষণে Arsenic album আপনাকে আরোগ্য করবে।

(১৬) কস্টিকাম (Causticum): যারা নিজের চাইতে অন্যের দুঃখ-কষ্টে বেশী কাতর হয়ে পড়েন, তাদের যে কোন রোগের জন্য (শক্তি ৩০,২০০) খাওয়ান।

(১৭)  সালফার (Sulphur): নোংরা বা অপরিচ্ছন্ন স্বভাবের জন্য- Sulphur বিধেয়। রাস্তাঘাটে অনেক পাগল দেখা যায়, যারা এতো নোংরাভাবে থাকে যে, মনে হবে একটি চলমান ডাস্টবিন। এদেরকে যদি একমাত্রা সালফার (Sulphur) খাওয়ানো যায়, তবে দেখা যাবে এদের পাগলামীও ভালো হয়ে গেছে এবং পরিস্কার-পরিচ্চন্ন থাকারও চেষ্টা করতেছে।

(১৮) থুজা (Thuja occidentalis): অন্ধবিশ্বাস, অমূলক বিশ্বাস বা ফিক্সড আইডিয়া (Fixed idea) হলো এমন বিশ্বাস যার পেছনে কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই। এসব রোগীর জন্য ইহা শ্রেষ্ট ঔষধ। শুঁচিবাইয়ের জন্য অর্থাৎ যারা সারাক্ষণ ধোয়ামোছা নিয়ে ব্যস্ত তাদের জন্যও ইহা উপকারী।

(১৯) বিউফো রানা (Bufo rana): নোংরামি, লুচ্চামি, লাম্পট্য, হস্তমৈথুন ইত্যাদি স্বভাব দূর করার জন্য (শক্তি ২০০) খান।

(২০) স্পাইজেলিয়া (Spigelia): কোন শারীরিক বা মানসিক রোগী যদি আলপিনের মতো চৌকো বা সূচালো (fear of pointed things) জিনিসকে মাত্রাতিরিক্ত ভয় পায়, তবে তাকে স্পাইজেলিয়া Spigelia ঔষধটি খাওয়াতে হবে। অন্যদিকে কোন রোগী যদি সারাক্ষন আলপিন নিয়ে খেলা করতে থাকে, তবে তার ঔষধ হলো সাইলিসিয়া (Silicea)।

(২১) মার্ক সল (Mercurious solbulis): ঔষধটির প্রধান লক্ষণ হলো মতবিরোধে রোগের সৃষ্টি বা বৃদ্ধি (aggravation from contradiction)। তার কথার/কাজের কেউ বিরোধীতা করলে বা বাধা দিলে, তা সে সহ্য করতে পারে না। তার ভেতরে বিরাট রিয়েকশান/প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে সে কোন না কোন শারীরিক বা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

(২২) হাইড্রোফোবিনাম (Hydrophobinum/Lyssinum): ঔষধটি কারো স্বভাব হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে বিপরীত ধরনের হয়ে গেলে তাকে খাওয়াতে হবে। এই ঔষধটি পাগলা কুকুরের জীবাণু থেকে তৈরী করা হয়। একটি কুকুর যা এক সময় আপনার অনুগত ছিল, বাধ্য ছিল, আপনাকে ভালবাসত, আপনার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল; সেটি হঠাৎ পাগলা কুকুর হয়ে গেলো। সেটি এখন আর আপনার কথা শুনে না, আপনাকে ভালোবাসে না বরং আপনাকে কামড়াতে চায়। ঠিক এই রকম পরিস্থিতি যদি কোন মানসিক রোগীর মধ্যে দেখা যায়, তবে তাকে হাইড্রোফোবিনাম খাওয়ান।  হাইড্রোফোবিনামের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো বুক ফাটা তৃষ্ণা, পানিকে ভয় পাওয়া, চকচকে বা উজ্জ্বল বস্তু বা আলো অসহ্য লাগা, মুখ থেকে লালা পড়া,পানির শব্দকে ভয় পাওয়া, পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে থাকা (permanent erection) ইত্যাদি।

(২৩) সিকিউটা ভিরোসা (Cicuta virosa): কোন করুণ, দুঃখজনক, মর্মান্তিক কাহিনী শুনলে বা নাটক-সিনেমা দেখলে যদি কেউ খুবই কষ্ট পায়/কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে (Horrible things, sad stories affect profoundly), তবে তার যে-কোন শারীরিক-মানসিক রোগে সিকিউটা ভিরোসা (Cicuta virosa)ঔষধটি ব্যবহারে দারুন ফল পাবেন।

(২৪) কফিয়া ক্রডা (Coffea cruda): অতিরিক্ত মানসিক উত্তেজনা ও অনিদ্রার জন্য  (শক্তি কিউ, ৩,৬,৩০,২০০) খেতে পারেন ।

(২৫) এগারিকাস (Agaricus muscarius): সারাক্ষন মাথাঘুরানি, শরীরের বিভিন্ন পেশীতে (বিশেষত চোখের ও মুখের) কম্পন এবং ঝাকুঁনি, ছড়া-কবিতা বানিয়ে বলতে থাকে, শিশুদের মতো ছেলেমানুষি আচরণ, সামনে যাকে পায় চুম্পন করে, রাক্ষুসে ক্ষুধা, ভালো মতো না চিবিয়েই খেয়ে ফেলে, মাথা ঘোরাতে থাকে, পিছনের দিকে পড়ে যাওয়া প্রবনতা, বজ্রপাতের সময় রোগের মাত্রা বেড়ে যায়, পায়ের বুড়ো আঙুলের ফুলা-ব্যথা, ঠান্ডা বাতাসে হাঁটলে রোগের মাত্রা বেড়ে যায় ইত্যাদি লক্ষন থাকলে প্রয়োগ করুন।

(২৬) ভয়ানক বদমেজাজের জন্য- Nux vomica, Chamomilla কিংবা Kali Iodatum (শক্তি ৩০,২০০) খান।

(২৭) শীঘ্রই পাগল হয়ে যাব মনে হলে- Calcarea carb অথবা Actea racemosa আপনার উপকারী ঔষধ (শক্তি২০০বা আরো উচ্চখাওয়ান)।

(২৮) মেয়েদের সমকামিতা (homosexuality) দূর করার জন্য- প্লাটিনাম মেট (Platinum metallicum) অথবা পালসেটিলা (Pulsatilla pratensis) ঔষধগুলো লক্ষণ অনুযায়ী প্রযোজ্য এবং পুরুষদের সমকামিতা নিরাময়ের জন্য- ল্যাকেসিস (Lachesis), সালফার (Sulphur) ঔষধগুলো লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োগ করুন।