মাদার টিংচার এর ব্যবহার প্রসঙ্গে আলোচনা

-ডা. রবিন বর্মন
মাদার টিংচার
★ মাদার টিংচার কি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ?
★ মাদার টিংচার কি ব্যবহার করা যায়, বা করা উচিত?
★মাদার টিংচার ব্যবহার করা কি খুবই অপরাধ?
★ মাদার টিংচারে কি রোগ সারে?
এই ধরনের প্রশ্ন গুলি প্রায়ই ওঠে, এবং ফেসবুকেও দেখি প্রায়ই আলোচনা হয়৷
এ প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য–
মাদার টিংচার অবশ্যই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। কারণ এই ঔষধ হলো সব ধরনের শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মূল বা মাদার। তাহলে মাদার যদি হয়, অর্থাৎ, মা যদি হয়, তাহলে সন্তানের অস্তিত্ব মাকে ছাড়া হয় কি করে? মা থেকেই তো সন্তানের উৎপত্তি হয়েছে, অর্থাৎ মাদার টিংচার থেকেই তো ঔষধগুলি শক্তিকৃত হয়ে পরপর এসেছে । সুতরাং হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া মেনে, ফার্মাকোপিয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করে, বিভিন্ন হার্বস থেকে যে টিংচার বা নির্যাস বের করা হয়েছে, তাই ত মাদার টিংচার নামে অভিহিত হয়েছে। তাই নিঃসন্দেহে মাদার টিংচার হোমিওপ্যাথি ঔষধ।
★ মাদার টিংচার কি ব্যবহার করা উচিত?
হ্যানিম্যান প্রথম জীবনে মাদার টিংচার ব্যবহার করেছিলেন। কতদিন করেছিলেন তা সঠিক বলা যায় না। কারন, সঠিকভাবে সাল, তারিখ দিয়ে তথ্য ভিত্তিক লেখা আমার চোখে পড়েনি। পরবর্তী একটা সময় থেকে তিনি অর্গাননের লেখার মধ্যে ঔষধগুলিকে শক্তিকৃত করতে হবে বলে গেছেন। কিন্তু স্ট্রিক্টলি মাদার টিংচার ব্যবহার করা যাবে না, বা করো না, এমন কথা আমি কোথাও পাইনি, মানে আমার চোখে পড়েনি। তবে অর্গাননে, বা, ক্রনিক ডিজিজের থিওরিটিক্যাল পার্টে কোথাও সেইভাবে মাদার টিংচার ব্যবহার করতে বারন করেছেন কি না, আমি মনে করতে পারছি না। কারুর জানা থাকলে শেয়ার করবেন with reference of his writings—-Name of book and page no.).
কিন্তু পরবর্তীকালে হেরিং এবং অন্যান্যরা বহু
ঔষধ মাদার বা লো পোটেনসি দিয়ে প্রুভিং করেছেন। সেই সব ঔষধগুলি লো পোটেনসি বা মাদার টিংচার ছাড়া ভাল কাজ করে না।
তবে, সেই সব ওষুধ যে দিতেই হবে এমন কোন কথা নেই । ঐ সব ঔষধ ব্যবহার না করেও হ্যানিম্যানের আবিষ্কার করা ওয়েটি ওষুধগুলি দিয়েও রোগ সারানো যায়।
★ মাদার টিংচার প্রয়োগে কি রোগ সারে?
না, মাদার টিংচার প্রয়োগে রোগ সারে না, এ্যালোপ্যাথিক ঔষধগুলির মতন রোগলক্ষনকে সাময়িক প্রশমিত করতে পারে।
তাই, প্যাথলজিক্যাল ডেস্ট্রাক্টিভ কেসে, অর্থাৎ যে সব কেসে অর্গানিক ডেসট্রাকসন হয়েছে, সেখানে শক্তিকৃত ঔষধ দিলে সিভিয়ার এ্যাগরাভেশন হওয়ার ভয় থাকে, তাই সেই সব রোগীকে রিলিভ দেওয়ার জন্য মাদার টিংচার প্রেসক্রাইব করা যেতেই পারে। আমার মনে হয়, তা খুব অপরাধের মধ্যে পড়ে না, বা, পড়বে না।
আবার, যেখানে প্রথমেই কেস টেকিং করে কনস্টিটিউশনাল ঔষধ দেওয়া সম্ভব এবং রোগী আরোগ্য করা সম্ভব, সেখানে অহেতুক পরপর দিনের পর দিন মাদার দিয়ে সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন হয় না । তাতে রোগ একটা লেভেলের বেশী কমবে না, এবং কোনরকম পার্মানেন্ট বা স্থায়ী আরোগ্য হবে না। একসময় বিরক্ত হয়ে রোগী চলে যাবে ।
যেমন রিসেন্টলি আমার পুত্রসম একজন ট্যালেন্টেড জুনিয়র, যেখানে প্রথম দিনেই কেস টেকিং করে কনস্টিটিউশনাল শক্তিকৃত ঔষধ দিতে পারতো, মানে-দেওয়ার সুযোগ ছিলো, কেন জানি না, তা না করে পরপর তিনবার, মানে তিন মাসের জন্য মাদার প্রেসক্রাইব করে গেলো। তাতে আরোগ্য ত হচ্ছিল না, সময় নষ্ট হয়েছিলো, এবং শেষে রোগী বিরক্ত হয়ে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো । কাকতালীয় ভাবে সেই রোগী আমার হাতে এসে পড়ে। আমি রোগীটিকে তার কাছ থেকে আমার কাছে আসার জন্য কিন্তু আনন্দিত হইনি, বরং তার প্রেসক্রিপসন দেখে মনে ব্যথা পেয়েছিলাম। কারন— রোগীটি ত dissatisfied হয়ে বেরিয়ে পড়েছে, আমার কাছে না আসলেও অন্য জায়গায় যেতো। ঐ পুত্রসম জুনিয়রের অনেক সাকসেস কেস দেখেছি৷ ওর বিভিন্ন পোস্ট থেকে বুঝেছি he is Knowledgeable, he has studied well. ওকে ভালবাসি বলে এই ভুলটা ওর চোখে পড়ার জন্য নাম, ঠিকানা কিছুই না দিয়ে শুধু ওর লেখা অংশটুকু পোস্ট করেছিলাম, এইটা শেখানোর জন্য, যে—- যেখানে gross pathology নেই, palliation র দরকারও নেই, এবং Constitutional treatment প্রথম থেকেই করা যায়, করার সুযোগ অাছে, সেখানে বারবার palliation করতে যাওযার আমার কি প্রয়োজন?
আবার palliation র ও similarity আছে। Without similarity Q বা অন্য শক্তিকৃত ঔষধ দিয়ে palliation করা যাবে না।
তাই যে কথা বলছিলাম, মাদার দিয়ে কিন্তু রোগ সারানো যাবে না। আর মাদার দিয়ে palliation করতে গেলেও মাদার দিতে চাওয়া ঔষধগুলির সিমিলারিটি লাগবে।
★ বিভিন্ন বইয়ে লেখা, বিভিন্ন মাদার কি বিভিন্ন রোগে ঠিকমতন কাজ করে? অর্থাৎ প্যালিয়েশন হয়? উত্তর—-না। আমি বহুবার, বহু রোগীতে, বহু মাদার পরীক্ষা করে দেখেছি৷ বিভিন্ন বইয়ে যেভাবে বলা অাছে, সেভাবে মাদারগুলি খুব বেশী কাজ করে না, বা প্যালিয়েশনও করতে পারে না। যেমন—
* ব্লাড সুগার কমাতে: সিজিজিয়াম, জিমনিমা সিলভেসটারিস —- একদম সুগার কমে না।
* ক্রনিক ডিসেনট্রি বা ডায়েরিয়া: চ্যাপেরা এ্যামেরা, কুরচি, — বিশেষ কোন কাজ করে না।
* হার্টের ভালভুলার ডিজিজ: এ্যাডোনিস ভার— কিছুই হয় না,
* ব্লাড প্রেসার কমাতে: ক্রাটিগাস, রাউলফিয়া কিছুটা কাজ করে, কিন্তু ভিস্কাম এ্যালবাম ভাল কাজ করে না।
* এ্যালফ্যালফা— খুব খিদে বাড়তে দেখিনি কারুর।
* পুরুষদের পোটেনসিয়ালিটি বাড়াতে: নুফার, ইয়োমবিনাম, ড্যামিয়ানা, ট্রিবুলাস, অশ্বগন্ধা — খুব কার্যকরী কোন রোগীতেই বুঝি নি।
* প্যাসিফ্লোরা — ঘুম পাড়াতে পারিনি।
* রোবিনিয়া— এ্যাসিডিটি কমাতে পারে না,
* স্ক্রোফুলেরিয়া নোডোসা— ব্রেস্ট টিউমার কমাতে পারে না,
আমি সবরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি, এবং দীর্ঘদিন পরে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি যে —– এক বা দুই ডোজ শক্তিকৃত কনস্টিটিউশনাল ঔষধই পারে দ্রুত, স্থায়ী সব রকম সমস্যার সমাধান করতে।
প্রসঙ্গত বলে রাখি ২/৪ লাইন করে লেখা বোরিকের মেটিরিয়াতে অনেক রকম যে সব ঔষধে বিভিন্ন কায়দার adjective দিয়ে বলা আছে, বেশীরভাগ ঔষধগুলি কিন্তুু তেমন কোন কাজ করে না। অথচ বেশ সুন্দর করে এইরকম বিভিন্ন কায়দায় লেখা আছে—-
* One of the best medicines,
* Has found very miraculous result,
* A great action over the—
* Acts best upon the—-
* Marked action over the —
*Highly efficacious in—-etc.
আমাদের হোমিওপ্যাথিক কলেজের অনেক টিচাররা জীবনে ঐ সব ঔষধ কেনেননি, দেখেননি, পরীক্ষা করেননি, অথচ—- ঐ বোরিকের বইয়ে লেখার কায়দায় ক্লাসে বা চেম্বারে খুবই লেকচার দেয়। নিজেরা ত আত্মপ্রবঞচনা করেই + ছেলেদেরকেও মিসগাইড করে, যার কোন ক্ষমা নেই।
কারন সে একদিন মারা যেতে পারে, কিন্তু তার শেখানো ভুলটা তরুন কোমল মস্তিষ্কগুলির মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে থাকে।
অযথা খরচ করে মিথ্যা শেখানো বুলির জন্য ঐ ধরনের অনেক ঔষধ কিনে চেম্বার ভরে রাখে, অথচ কাউকে কোন ব্যাপারে দিয়ে ফল পায় না, এক সময় হতাশগ্রস্থ হয়ে পড়ে।