বিশ্বব্যাপি সরকার স্বীকৃত ও বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত একাডেমিক হোমিওপ্যাথি কোর্স এবং সনদপত্র

ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু) :
দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা শিক্ষায় যে কোন একাডেমিক কোর্সের ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট অনুমোদন এবং আইনগত গ্রহণযোগ্যতা/বৈধতা নিতে দরকার হয় নিজ নিজ দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর/স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ/কারিগরি শিক্ষা বিভাগ/বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদন সহ স্বীকৃতি প্রজ্ঞাপন/পরিপত্র। এগুলো ধাপ অনুস্বরণ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর/স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সরকারি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তথ্য ও নথি সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাই করে থাকে। স্নাতক/গ্রাজুয়েট ও স্নাতকোত্তর/পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি বিষয়ে লক্ষ্য করে গ্রহণযোগ্য কোর্সের কারিকুলাম, গ্রহণযোগ্যতা, সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় কিনা বা সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিনে কিনা? শিক্ষার মান? সে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ও কোর্সটির অনুমোদনে সরকারের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর সংশ্লিষ্ট হতে যৌথ লিখিত অনুমোদন নিয়েছে কিনা? তা না হলে সে ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট দিয়ে দেশ-বিদেশে কোন একাডেমিক কোর্সে ভর্তি হতে পারবেনা এবং সে কোর্সের ডিগ্রির কোন সমমান হবেনা, কোন সরকারি কর্মসংস্থান হবেনা, কোন আইনগত গ্রহণযোগ্য বা মর্যাদাও পাবেনা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সে দেশের সরকার স্বীকৃত ও মন্ত্রণালয়/শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্বীকৃত জেনারেল/সাধারণ শিক্ষার বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাচারাল মেডিসিন বা অল্টারনেটিভ মেডিসিন বা মেডিসিন বিভাগ বা ফার্মেসী বিভাগ আছে এর অধিনে বিশ্ববিদ্যালয় হতে অধিভুক্ত ও সরকার অনুমোদিত কলেজ গুলোতে ডিপ্লোমা, স্নাতক, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে হোমিওপ্যাথি ডিপ্লোমা, বি-এসসি/বিএইচএমএস, এম-এসসি/এমডি কোর্স আছে। কোর্স ও পরীক্ষা সে গুলো সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিনে অধিভুক্ত কলেজ পরিচালনা করলেও সরাসরি ফলাফল ও সার্টিফিকেট সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করে আসছে।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকৃত কোর্স ও বোর্ড সরকারি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড এর অধিনে অধিভুক্ত হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ গুলোতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ডিএইচএমএস কোর্স ও সার্টিফিকেট প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ফার্মেসী বিভাগ এর অধিনে অধিভুক্ত ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্বীকৃত স্নাতক/ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্স বাংলাদেশের দুইটি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে আছে। বাংলাদেশে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইনে অল্টারনেটিভ মেডিসিন এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় কোন ভালো অবকাঠামো মেডিকেল কলেজকে অধিভুক্ত করলে বা অধিভুক্ত করে নিতে পারলে তার অধিনে হোমিওপ্যাথিক স্নাতক, স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট নেবার সুযোগ আছে। (সম্প্রতি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি হামদার্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ-বগুড়া কে অধিভুক্ত করে ব্যাচেলর/স্নাতক ডিগ্রি বিইউএমএস ইউনানী কোর্স অনুমোদন দিয়েছে)।
ভারতে সরকারিভাবে সরকারি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি হোমিওপ্যাথি এমডি/এমএস, পি-এইচডি কোর্স চালু আছে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গ প্রদেশে সরকারি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স এর অধিনে অধিভুক্ত হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ গুলোতে হোমিওপ্যাথি বিএইচএমএস কোর্সের ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট প্রদান করছে। ভারতের রাজস্থান সহ অনেক স্থানে বেসরকারীভাবে সরকার স্বীকৃত হোমিওপ্যাথি বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমডি, পি-এইচডি ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট প্রদান করে আসছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় অনেক মর্যাদার ও সম্মানের নিজ নিজ দেশের সরকার কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বৈধ একাডেমিক হোমিওপ্যাথি কোর্স হলো :
(১) ডিএইচএমএস [বি-এসসি (পাস) হোমিওপ্যাথি/ডিপ্লোমা (হোমিওপ্যাথি)],
(২) বিএইচএমএস [বি-এসসি (অনার্স) হোমিওপ্যাথি],
(৩) এমডি [এম-এসসি (হোমিওপ্যাথি)/এমএস (হোমিওপ্যাথি)],
(৪) পি-এইচডি (স্নাতকোত্তর গবেষণা)।
মনে রাখা দরকার গ্রাজুয়েট/ব্যাচেলর/স্নাতক বা পোস্ট গ্রাজুয়েট/মাস্টার্স/স্নাতকোত্তর কোর্সের সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কেউ দিতে পারেনা ও সার্টিফিকেট স্বাক্ষর থাকবে ভিসি ও রেজিষ্ট্রার। কোন কলেজের প্রিন্সিপাল বা কলেজের রেজিষ্ট্রার বা অফিস সহকারীর স্বাক্ষর থাকেনা। কলেজ প্রশংসাপত্র স্বাক্ষর প্রিন্সিপাল করতে পারে। তবে সার্টিফিকেটে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় দিবে। বিশ্ববিদ্যালয় এর ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় রেজিষ্ট্রারের স্বাক্ষরিত বাধ্যতামূলক।
যে কোন দেশে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্বীকৃত কিনা? কোন কোন কোর্স সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন প্রাপ্ত তা সরকারী সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ওয়েবসাইডে পাওয়া যায়।
উন্নত বিশ্বে যারা সরকার স্বীকৃত বৈধ বিশ্ববিদ্যালয় হতে বা সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকার স্বীকৃত কলেজ হতে পাস করে তারা কখনও বা বেশির ভাগই সার্টিফিকেট সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইডে দেয়না বা প্রচার করেনা। মনে করে অনেক কষ্টে সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে বা সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ হতে পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্জিত সার্টিফিকেট এর ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের বিষয় নয়৷ প্রয়োজনে সাক্ষাত করে দেখে যান ও কথা বলে পরিচিতি হয়ে যান বা সরকার স্বীকৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক দপ্তরে এসে বিস্তারিত জেনে যান।
[ দেশি বা বিদেশী যেগুলো সার্টিফিকেট বিভিন্ন সময় ওয়েবসাইড/ফেসবুক/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় তা বেশিরভাগ অনলাইন বা শর্ট কোর্সের নামে ভুয়া ডিগ্রি। প্রায়জনকে আকর্ষণ করে ব্যবসা করার জন্য ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবসায়ীরা ভুয়া/অবৈধ কোর্স পরিচালনা করার জন্য বিভ্রান্ত করতে ব্যবহার করে ও চটকদারি বিজ্ঞাপন দেয় এবং এজেন্ট নিয়োগ দেয়। ভুয়া কোর্সধারীরা ও ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবসায়ীরা এগুলো সার্টিফেকেট এর ছবি দিয়ে ব্যবসা ও প্রচার চালায় ]।
(তথ্যসূত্র : নথি/ডকুমেন্টস, চিকিৎসা শিক্ষা/শিক্ষা বিধিমালা/আইন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউজিসি, ওয়েবসাইড ও অন্যান্য)