বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি শিক্ষার্থীরা রাজপথে সোচ্চার হলে, হোমিওপ্যাথি উন্নয়ন হবে

ডা. মো. আব্দুস সালাম (শিপলু) :
ভারতে হোমিওপ্যাথি উন্নয়ন এমনিতেই হয়নি! ভারতের হোমিওপ্যাথি উন্নয়নের পিছনে কারণ গুলো জেনে নিন। তা বাংলাদেশ সহ বিশ্বে অনেক দেশের হোমিওপ্যাথি দাবি-অধিকার আদায় ও বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নে দৃষ্টান্ত হতে পারে।
১৯৭২খ্রি. হতে বাংলাদেশে সরকারিভাবে আন্তজার্তিক পর্যায়ের ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) কোর্স চালু হয়। চারদশক যাবত বাংলাদেশের ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) কৃতরা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার।
সেসঙ্গে বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথরা সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উত্থাপন করছে সরকারি হোমিওপ্যাথি কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য/কলেজ স্থাপন বাণিজ্য এবং স্বজনপ্রীতির সঙ্গে জড়িয়েগেছে। অনেকের আর্থিক অবস্থা অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন এসেছে। এজন্য সরকারিভাবে হোমিওপ্যাথিতে উন্নয়ন হচ্ছেনা। তা সরকারিভাবে তদন্ত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
অতীতে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড এর চেয়ারম্যান, রেজিষ্ট্রার সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হতো সরকারি মেধাবী/বিসিএস ক্যাডার অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। আর ডিএইচএমএস’দের বোর্ডে শুধু ডিএইচএমএস পাস বোর্ড সদস্যরা প্রতিনিধিত্ব করতো অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা রাজনীতি নয় হোমিওপ্যাথি তাদের ধ্যান ও জ্ঞান ছিল। আর বর্তমান কি অবস্থা? অদূর ভবিষ্যতে ডিএইচএমএস’রা আর কি দেখবে?
তবে ডিএইচএমএস’রা বুঝে গেছে কিভাবে রাজনৈতিক সংগঠনের বড় পদ-পদবি প্রাপ্ত হয়ে যদি বোর্ডের বড় পদ পাওয়া যায়? যেখানে মেধাবী/বিসিএস পরীক্ষা নয়? কোন দলের দলীয় পরিচয় বড়? সরকারি বড় স্থায়ী পদ, সরকারি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। এটা পরবর্তী সরকারের রাজনৈতিক নেতারা একইভাবে ব্যবহার করলে তা কখনও ভাল দৃষ্টান্ত হবেনা। আর সরকারি পদ-পদবি ও সুযোগ-সুবিধাতে থেকে সরাসরি দলীয় রাজনৈতিক প্রচার, পদে থাকাটা নৈতিকতা বিরোধী বা সরকারি কর্মচারি বিধিমালা লংঘন কিনা?
১৯৭২খ্রি. হতে ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) কৃতরা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। ৮০ দশক বা ৯০ দশক এর তৎকালীন হোমিওপ্যাথিক নেতৃবৃন্দের আন্দোলন ও সংগ্রাম ছিল ডিএইচএমএস’দের উচ্চশিক্ষা ও সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু ডিএইচএমএস সমমান বিষয়ে সোচ্চার হয়নি। তখন যদি ডিএইচএমএস কোর্সের সমমান হতো তাহলে বর্তমান প্রজন্মকে আর আন্দোলন করতে হতোনা।
২০১৩খ্রি. হতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বার বার সংশোধনের নামে পড়ে থাকা (১) বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত), (২) স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) যথাযথভাবে ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি)’দের অধিকার বজায় রেখে প্রণয়ন ও জাতীয় সংসদে পাস করা দ্রুত প্রয়োজন। বাংলাদেশের চারদশকের শোষিত ও বঞ্চিত হোমিওপ্যাথগণ ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) কোর্সের সমমান নির্ধারণ করা, ডিএইচএমএস পাসকৃতদের কনডেন্সড কোর্সের মাধ্যমে সকলকে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা করা, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করা, হোমিওপ্যাথি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, হোমিওপ্যাথদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এলোপ্যাথদের মত বিএমএ মত এককভাবে সরাসরি সকলের ভোটে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল এসোসিসেশন চায়। যার কোনটায় ১৯৭২খ্রি. হতে অদ্যবধি কার্যকর হয়নি। সরকারি হোমিওপ্যাথি কর্তৃপক্ষ/বোর্ড বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি শিক্ষার্থীরা ভারতের মত রাজপথে যেদিন নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে হোমিওপ্যাথি দাবি ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবে সেদিন বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি উন্নয়ন হবে! সুদিন আসবে। বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণকারি ও মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-প্রজন্ম ডিএইচএমএস (হোমিওপ্যাথি) কৃতরা প্রয়োজনে ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত।
স্বাধীনতার চারদশক যাবত বাংলাদেশের ডিএইচএমএস পাসকৃতরা শোষিত ও বঞ্চনার শিকার। ডিএইচএমএস কোর্সের কোন সমমান নির্ধারণ হয়নি। নেই উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা। কোর্সের সমমান না থাকায় নেই কোন সরকারি কর্মসংস্থান ব্যবস্থা। নেই কোন সামাজিক মর্যাদা। আবার হোমিওপ্যাথিক সেডিকেল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা না হওয়াতে মাঠ পর্যায়ে হোমিওপ্যাথরা বিভিন্ন ঝামেলার শিকার হচ্ছেন।
অনেক অভিজ্ঞ মহল মনে করেন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড কি ভারত, পাকিস্থান, ভুটান, শ্রীলংকা সহ অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে স্বতন্ত্র বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল (বিএইচএমসি) প্রতিষ্ঠা হতে দিবে? বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) তে রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকদের অধিকার ও হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ গুলোর শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল (প্রস্তাবিত) প্রতিষ্ঠার কথা লেখা আছে ও এলোপ্যাথদের বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) মত হোমিওপ্যাথিতে এককভাবে একটি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল সংগঠন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। যে নতুন সংগঠনের নাম হবে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল এসোসিয়েশন। যার গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করবে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড। কাউন্সিল হলে বোর্ডের একক ক্ষমতা খর্ব হবে বা একক ক্ষমতা কমে যাবে। বোর্ডের অনেক পকেট সংগঠন ও সংগঠনের নেতার মাসিক সংগঠনের চাঁদার ব্যবসায় বাঁধা হবে।
একারণেই বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) ২০১৩খ্রি. হতে বার বার সংশোধনের নামে বোর্ডে ও মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকে, কিন্তু চূড়ান্ত হয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগে যাচ্ছে না ও জাতীয় সংসদে পাসও হচ্ছেনা।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও বিশেষভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এক জিনিস এবং মেধা-যোগ্যতা-গ্রহণযোগ্যতায় মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত আরেক জিনিস। রাজনৈতিক ও বিশেষভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি হোমিওপ্যাথি কর্তৃপক্ষ কাজ করছেনা। ক্ষমতা ও বিশেষ সুযোগ-সু্বিধা এমন একটা জিনিস যেটা অনেকে ত্যাগ করতে পারেনা। কারণ আজও বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) পাস হচ্ছেনা। ফলে আইনে অর্ন্তভুক্ত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা হচ্ছেনা ও সরাসরি দেশের সকল হোমিওপ্যাথদের ভোটে সরকারিভাবে প্রতিনিধিত্বকারি এককভাবে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল এসোসিয়েশন গঠিত হচ্ছেনা এবং গঠনতন্ত্রও প্রণয়ন হচ্ছেনা।
বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি উন্নয়নের পরিবর্তে অনেক পিছিয়ে আছে। জনস্বার্থে বাংলাদেশে সরকারি হোমিওপ্যাথি কর্তৃপক্ষ/বোর্ড হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক ও অধিকার এবং শিক্ষা-মান উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন (প্রস্তাবিত), স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন (প্রস্তাবিত) আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদে পাস করার পদক্ষেপ নিবে কি?
বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বাষির্কীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।