Bacillinum (ব্যাসিলিনাম)- ডাঃ হাসান মির্জা

Bacillinum (ব্যাসিলিনাম):
* টিউবারকুলার যুক্ত ক্ষয়কাশিগ্রস্ত রোগীর ক্ষতস্থানের পুঁজ থেকে ঔষধটি তৈরি হয়। মনীষী ফিঙ্কে ও মনীষী সোয়ান যক্ষাক্রান্ত ক্ষতস্থানের পুঁজ বা গযার থেকে ঔষধটি প্রস্তুত করেন। আবার মনীষী হিদ ব্যাসিলাস টিউবারকিউলোসিস নামের অনুদেহীযুক্ত ফুসফুস দ্বারা তার ঔষধটি প্রস্তুত করেন। সেই কারণে ডাঃ হিদ কর্তৃক আবিষ্কৃত ঔষধটির নাম ব্যাসিলিনাম এবং ডাঃ ফিঙ্কে ও ডাঃ সোয়ান কর্তৃক আবিষ্কৃত ঔষধটিকে টিউবারকুলিনাম বলে।
* শারীরিক কিছু দুষ্ট ধর্মের সংশোধন করে রোগীকে শৃঙ্খলায় আনতে ঔষধটি অপ্রতিদ্বন্দী। মনীষী সোয়ান-হিদদের অজস্র ধন্যবাদ যে তারা টিউবারকুলিনাম ব্যাসিলিনামের মধ্য দিয়ে রোগীচরিতের স্বরূপ উদঘাটন করে চিকিৎসার জগৎকে কতইনা স্বাচ্ছন্দ করে দিয়েছেন।
* মনীষী কেন্ট বলেন, “ইহা একটি গভীরক্রিয়, ধাতুগত গভীক্রিয়া ঔষধ। কারণ ইহাও রোগবিষ হইতে প্রস্তুত, …ইহা জীবনের গভীরে প্রবেশ করে। …ইহাকে ‘সোরিনাম’ যে শ্রেণীর ঔষধ সেই শ্রেণীর ঔষধ বলিয়া মনে করা যাইতে পারে।”
# ক্ষয়দোষ/রোগান্তর:
* ব্যাসিলিনামের প্রথম ও প্রধান কথা- বংশগত বা পুরুষানুক্রমিক ক্ষয়দোষ। বংশগত ক্ষয়দোষে রোগী ক্রমাগত রোগ থেকে রোগান্তরে ভুগতে থাকে।
* আমরা যদি রোগির ইতিহাস পাঠে এ সত্য অবগত হই যে, রোগির পিতা-মাতা, তার ভ্রাতাভগ্নি বা পূর্বপুরুষের কেহ কখনো অর্শ, ভগন্দর, নালিঘা, ডায়াবেটিস, যক্ষা বা ম্যালেরিয়া রোগে ভুগেছেন বা তৎকারণে মৃত্যু হয়েছে তাহলে অনুসন্ধানে নিশ্চয় জানা যাবে যে বংশানুক্রমিক ক্ষয়দোষে আক্রান্ত এইশ্রেণীর রোগি কখনো বাত, কখনো অর্শ, কখনো উদরাময় বা আমাশয়, কখনোবা শিরঃপীড়া ইত্যাদি রোগে ভুগতে থাকে।
* রোগ থেকে রোগান্তরপ্রাপ্তির কারণে রোগি ক্রমশঃ দুর্বল, ক্ষীণ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কোন ঔষধই রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেনা। ঠিক ঐরকম অবস্থায় রোগীকে উচ্চ শক্তির ব্যাসিলিনাম দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিৎ।
* যদি রোগি দেহে কখনো ফুসফুস, পাকস্থলী, স্নায়ুকেন্দ্র, কিডনি বা মস্তিষ্ক- একটির পর অন্যটি পীড়িত হয়, হঠাৎ একটি উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে ব্যাসিলিনাম উচ্চশক্তি দিয়ে তার চিকিৎসা করবেন।
# যক্ষারোগ/ক্ষয়কাশি:
* ক্ষয়দোষের স্বাভাবিক পরিবর্তনশীলতার পরিচয়ে আমরা দেখতে পাই যক্ষাক্রান্ত কোন পরিবারে উম্মাদরোগী বা উম্মাদগ্রস্ত পরিবারে যক্ষারোগী।
* যদি আমরা কখনো এমন দেখি যে কোন উদর আক্রান্ত রোগী তার রোগমুক্তির পর বাত বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছে-কিংবা স্নায়ুশুল থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্রাবে ভুগছে বা যক্ষা ভালো হয়ে উম্মাদ বা জ্বর ভালো হয়ে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগে ভুগছে তাহলে সর্বাগ্রে ব্যাসিলিনামকে বিচার করা উচিৎ।
* যখনই শোনা যাব যক্ষা রোগির সেবা করেছে তখন আমরা রোগির ফুসফুসটি উত্তমরূপে পরীক্ষা করে দেখবো। ক্ষয়দোষে অল্পে ঠান্ডা লাগা বা দুর্বলতার লক্ষণটি স্পষ্ট।
# শীর্ণতা:
* ব্যাসিলিনামের রোগিকে যতই প্রোটিন-ভিটামিন-ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য দিন না কেন রোগি ক্রমশঃ শীর্ণ হতে থাকে, শুকিয়ে যায়।
* ছোট শিশুরা নিম্নাঙ্গ থেকে শুকাতে থাকে, পেটটি জয়ঢাকের মত মনে হয়, সর্দি লেগেই থাকে, গ্রন্থিবৃদ্ধি ঘটে তখন এই ঔষধটি শিশুকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে পারে।
* যদি দেখা যায় যে, বালিকারা উপযুক্ত সময়ে ঋতুমতী হচ্ছেনা, দেহ শীর্ণ, কঙ্কালসার, তৎপরিবর্তে শুষ্ক কাশি লেগেই আছে কিংবা অতিরিক্ত দূর্বলতাবশতঃ উদরাময়ে ভুগে ভুগে শুকিয়ে যায় অথবা বিদ্যালয় বড়–য়ারা পড়তে বসলেই শিরঃশুলে ভুগছে তাহলে ব্যাসিলিনাম ও ক্যাল্কে.ফস তাদের জন্য উত্তম।
# ঠান্ডা অসহ্য:
* কু-চিকিৎসিত সোরাদোষে আক্রান্ত রোগী চিরকাল স্বাস্থ্যসুখে বঞ্চিত থাকে। এ রোগীর নিকট শৈত্য একেবারেই অসহ্য। রোগী চেষ্টা করে নিজেকে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে, মোটা পোষাক পরে থাকতে চেষ্টা করে, ঝড়বৃষ্টি বা জলো বাতাস থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু সহ¯্র সাবধানতা সত্তে¡ও তার ঠান্ডা লাগে। কেন এমন হয় রোগীর বোঝার কথা নয়। কিন্তু চিকিৎসকলে বুঝতে হবে এবং তদ্রুপ ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করতে হবে।
* প্লুরিসি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, পুরাতন সর্দি, কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি রোগে টিউবারকুলার ব্যাসিলিনাম যে অদ্বিতীয় ঔষধ তা মনে রাখতে হবে। এইসকল রোগে সালফারও অসাধারণ, তবে লক্ষণ থাকা চাই।
# চুলেজট:
* ক্লাসটারিং বা চুলে জট পাকিয়ে যায় অনেকের। মাথায় চিরুনি দিতে পারেনা। এই রোগে সোহাগার খই বা বোরাক্স উত্তম ঔষধ। সোরিনামও কম নয়। মনে রাখতে হবে ব্যাসিলিনাম এক্ষেত্রে অদ্বিতীয়।
# বাচালতা:
* ক্ষয়দোষ মানে বাচালতা আর বাচালতা মানে ক্ষয়দোষ। আর এই বৈশিষ্ট্যটি টিউবারকুলিনাম ব্যাসিলিনামেরও অন্যতম পরিচয়। ইনার ক্ষয়দোষ যেমন স্পষ্ট, শরীর শুকিয়ে যাওয়া যেমন স্পষ্ট, অলে।ফ ঠান্ডালা বা দুর্বলতা যেমন স্পষ্ট তেমনি বাচালতা লক্ষণটিও স্পষ্ট।
* জ্বরের প্রখর তাপে যখন গা পুড়ে যায় তখনও রোগী বকতে থাকে বা আবোলতাবোলভাবে বকে যায়। চিকিৎসক হিসেবে রোগীর চিত্তবিভ্রাট বা তার মননশীলতা খুঁজে নিতে হবে। কেন একজন রোগী এত বকবক করে তার উৎস খুঁজতে এবং সদৃশ ঔষধটি বেছে নিতে হোমিওপ্যাথিক সাধক হতে হয়। ব্যাসিলিনাম বকবক করবে, তার বাচালতা প্রকাশ করেব- এটাই তো স্বাভাবিক। যদি আমরা দেখতাম যে, টিউবারকুলারযুক্ত ক্ষয়দোষগ্রস্ত রোগীর মাঝে বাচালতা নেই তাহলে বিস্ময়ের সীমা থাকতোনা।
* ক্রমাগত বকবক করা বা বাচালতার লক্ষণটি ল্যাকেসিসের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। এর রোগী বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে নিরন্তর বকতে থাকে। কথা না বলে থাকতে পারেনা, মনও ভরেনা। একজন ছেড়ে অন্যজন, এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গ সে অনবরত বকেই যায়। গ্রহে যখন এক থাকে তখনও আপনমনে বকে যায়। স্ট্রামোনিয়ামের বকবকানি একটু ভিন্নতর। সে অন্য প্রকৃতির। এমন কার্ব বা এব্রোটেনামেও বাচালতা কম নয়। এই যে বকবকানি বা বাচালতা- এটি ক্ষয়দোষের অনিবার্য পরিণতি।
# চর্মরোগ/দাদরোগ:
* চর্মরোগের উপর কোনরকম বাহ্যিক মলম লাগানোর কারণে চর্মরোগটি যখন দমন করা হয় তখন সেটি আত্মগোপন করে দেহাভ্যন্তরে তান্ডব সৃষ্টি করে। সুচিকিৎসার দ্বারা যতদিন না সেটি বাহিরে পুনঃপ্রকাশিত হয় ততদিন রোগী রোগ থেকে রোগে ভুগতে থাকে। রোগী হতাশ হয়। সে বুঝতেই পারেনা কেন তার এত রোগ, এত কষ্ট। চিকিৎসকরাও ধাঁধাঁয় পড়েন। প্যাথলজির কোন রিপোর্টই সদুত্তর দিতে পারেনা। একটি আন্দাজ অনুমানের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা চলতে থাকে।
* টিউবারকিউলোসিসের একটি বিশিষ্ট্য পরিচয় হল তার দাদরোগ। দাদ বা চর্মরোগের উপর মলম-প্রলেপের দ্বারা অবরুদ্ধ মনঃকণ্ডুয়ন চিকিৎসা করতে না পারলে হোমিওপ্যাথির বুকে ছুরিকাঘাত কারা হবে। পুরাতন বা চিররোগের স্বরূপ কদাচিৎ পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় বলে কখনো কখনো বিশেষ একটি লক্ষণ রোগের চিত্র উদঘাটন করে দেয়।
# কৃমিরোগ:
* অনেকে ঘুমঘোরে কথা বলেন, কেউবা ঘুমন্ত অবস্থায় দন্ত কড়মড় করে, অনেক শিশু ক্রমাগত মলদ্বার চুলকায়। এসব কৃমিরোগের লক্ষণ হলেও ব্যাসিলিনামের প্রকৃত পরিচয়, কৃমিরোগ মানেই অনেকে সিনার কথা ভাবেন। কিন্তু চিররোগ বা ক্ষয়দোষগ্রস্থ রোগীর জন্য সিনা কিছুই করতে পারবেনা, তার জন্য চাই ব্যাসিলিনাম, ক্যাল. ফস, লাইকো ইত্যাদি।
# সবিরাম জ্বর:
* ইহা সর্বাপেক্ষা প্রধান ব্যবহারের একটি অবস্থা সবিরাম জ্বর। আমাদের কতকগুলি অতি দূর্দ্দম্য প্রকৃতির সবিরাম জ্বর ঘুরিয়া আসে। পুনঃপুনঃ জ্বর ঘুরিয়া আসে। …জ্বরটি তাড়াইয়া দিবার পরেও কয়েক সপ্তাহ মধ্যে ঠান্ডা লাগিয়া বায়ু প্রবাহের মধ্যে বসিয়া থাকিয়া, অতিপরিশ্রান্ত হইয়া মানসিক পরিশ্রমের ফলে, অতি আহারের ফলে এবং পাকস্থলীর বিশৃঙ্খলতা উৎপাদন করার ফলে জ্বরটি ঘুরিয়া আসে। যখন এইরূপভাবে কোন দূর্দম প্রকৃতির সবিরাম জ্বর ঘুরিয়া আসে তখন টিউবারকুলিনাম প্রয়োজন হয়।
# গ্রন্থিবৃদ্ধি: ইহা অধিকাংশ ক্ষেত্রে গৃন্থিবৃদ্ধি এবং এবং ঘাড়ের গুটিকা রোগগ্রস্থ গ্রন্থিগুলিকে আরোগ্য করে।
# মন:
* রাত্রিকালে কষ্টদায়ক ও সদাস্থায়ী চিন্তা।
# শিরঃপীড়া:
* মস্তিষ্কের ও মস্তিষ্কঝিল্লীগুলির ক্ষয়রোগ। অতি ভয়ঙ্কর এবং অতি পুরাতন, নির্দিষ্টকাল ব্যবধানে বমনসহ শিরঃপীড়া।
# পাকস্থলী:
* সর্বপ্রকার খাদ্যে বিতৃষ্ঞা। গোস্ত এত বিতৃষ্ঞা যে উহা খাওয়া অসম্ভব হইয়া পড়ে।
# কোষ্ঠবদ্ধতা:
* কোষ্ঠবদ্ধতায় কষ্ট পাওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ।
# বাত-ব্যাথা:
* সর্বাঙ্গে ক্ষততা ও থেঁৎলাইয়া যাওয়ার ন্যায় অনুভূতি। হাড়গুলির মধ্যে কনকনানি। ডান কনুইয়ে বাতের যন্ত্রণা। উরুদ্বয়ে টানিয়া ধরার ন্যায় যন্ত্রণা।
# স্ত্রীরোগ:
* মহিলাদের জরায়ু ঝুলিয়া পড়ে এবং ভারিবোধ হয়। ঋতুকালে এক প্রকার শিথিলতাবোধ, যেন অভ্যন্তরিক যন্ত্রগুলি বাহির হইয়া আসিবে- এরূপ অনুভুতি।
# ইতিকথা:
* টিউবারকুলিনাম ব্যাসিলিনামে ছোটছোট ব্যথাপূর্ণ অসখ্য ফোঁড়া আছে, শিরঃপীড়া আছে- ছাত্র-ছাত্রীদের শিরঃপীড়া, হস্তপদে জ্বালা আছে, প্লুরিসি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, এপেন্ডিসাইটিস, গলক্ষত, কানচটা ঘা, নেফ্রাইটিস, মেনিঞ্জাইটিস, দৃষ্টিশক্তিহীনতা, মূত্রকষ্ট, সাইনোভাইটিস, ঋতু¯্রাবের গোলযোগ, টনসিল বৃদ্ধি ইত্যাদি সবই আছে। কিন্তু যেখানে যাই থাক ক্ষয়দোষ ও রোগ থেকে রোগের রূপান্তর প্রাপ্তির কথা কখনো ভুলবেন না।
এতএব, যে ব্যাক্তি উত্তাধিকারসূত্রে যক্ষারোগ পাইয়াছে, যে লোক দুর্বলতার অবস্থায় আসিয়া পড়িয়াছে, যাহারই সবিরাম জ্বর পুনঃপুনঃ নতুন করিয়া দিয়েছে এবং যাহারই এইরূপ মানসিক লক্ষণগুলি বর্তমান আছে তাহার জন্য তোমরা টিউবারকুলিনামের চিন্তা করিতে পার।