করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথি

লেখক-ডা. আহাম্মদ হোসেন ফারুকী।
এই ভাইরাসের প্রতিরোধক হোমিওপ্যাথির যে কোন ওষুধই হতে পারে, কারণ রোগ প্রতিরোধের পূর্ব শর্ত হলো জীবনী শক্তি শক্তিশালী বা সবল থাকা। আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি পরিচালনাকারীকে হোমিওপ্যাথির জনক ডা: হ্যানিম্যান কর্তৃক রচিত অর্গাননের চতুর্থ সংস্করণে (১৮২৯) তিনি জীবনী শক্তি শব্দটি ব্যবহার করেন।
ডা. হ্যানিম্যানের মতে- জড়দেহ, জীবনী শক্তি ও বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মন, এ তিনের সমন্বয়ে প্রত্যেক মানুষের চৈতন্যময় ব্যক্তিসত্ত্বা গঠিত। দেহে জীবনী শক্তির অভাবে বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মনের ক্রিয়া প্রকাশ সম্ভব নয়। আবার দেহকে আশ্রয় করে থাকে জীবনী শক্তি।উভয়ের সুসামঞ্জস্য ক্রিয়াশীলতায় মানুষ সুসাস্থ্যবান হয়ে উন্নত জীবনের পথে অগ্রসর হতে পারে।
জীবনী শক্তির সুনিয়ন্ত্রিত পরিচালনায় সুস্থ্য দেহে ভারী একটি বস্তুকে বহন করার কষ্ট অনুভুত হয় না বা এর অস্তিত্ব উপলদ্ধি করা যায় না। কিন্তু এটি অসুস্থ্ হওয়া মাত্রই টের পাওয়া যায়, বোধ হয় নানা ধরণের অস্বস্তি।
বিপুল দেহ যন্ত্রের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাবলীল পরিচালনায় কোথাও কোন বাঁধা বা অসুবিধা নেই। যেমন ইচ্ছা, অনিচ্ছা বা যা চিন্তা করি, সেভাবেই তা কার্যে পরিণত করছি।সমগ্র দেহের স্বতঃস্ফুর্ত ক্রিয়াশীলতার ফলে এই যে পূর্নাঙ্গ স্বাস্থ্যসুখ তা জীবনী শক্তির সর্বসময় কর্তৃত্বের ফল।জীবনী শক্তিহীন দেহ মৃত, ক্ষয়শীল, পচনশীল এবং তা পঞ্চভুতে বিলীন হয়ে যায়।
ডাঃ হ্যানিম্যান উল্লেখ করেন -পীড়িত দেহে যে লক্ষণ সমষ্টির প্রকাশ পায় তার মূলে থাকে অতিন্দ্রীয় কোন বিরুদ্ধ শক্তি যাদ্বারা জীবনী শক্তি আক্রান্ত হয় । জীবনী শক্তি বিপর্যস্ত হলে স্বাস্থ্যসুখে ব্যাঘাত ঘটে এবং ব্যক্তি মনোজগতে তখন নানাপ্রকার অস্বাচ্ছন্দ্য ও অপ্রীতিকর ভাব ফুটে ওঠে। ক্রমশঃ পীড়া কেন্দ্র হতে স্থুল দেহের দিকে সঞ্চারিত হয়ে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য লক্ষণসমষ্টির সৃষ্টি করে।
সুতরাং, পীড়াতে জীবনী শক্তিই প্রথমে আক্রান্ত হয়। জীবনী শক্তি আক্রান্ত হয়ে যেমন রোগের সৃষ্টি করে, তেমনি আবার আরোগ্যদায়িনী ক্রিয়াও এই জীবনীশক্তির মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে রোগীর স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনে।সূতরাং স্বাস্থ্য কথা কিংবা পীড়ায় জীবনী শক্তি সমভাবে ক্রীয়াশীল।
উপরের আলোচনায় একথা প্রতিয়মান হয় যে, রোগ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম প্রয়োজন জীবনী শক্তির সুস্থ্যতা। কোন দেশে যখন মহামারী দেখা দেয়, সে দেশের জনগণের প্রথম কাজ হলো যে যেই রোগে আক্রান্ত সে সেই রোগের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া।কারণ জীবনী শক্তিকে সবসময় সুস্থ্য ও সবল ভাবে তৈরি রাখতে হয়, রোগ শক্তিকে প্রতিরোধ করার জন্য।
এবার ভাবেন কোন ব্যক্তি একটি জটিল রোগে ভুগছে আর তাকে আপনি অন্য রোগের প্রতিরোধক ওষুধ দিচ্ছেন, এটা কোন নিয়মে পড়ে ভেবে দেখবেন। রোগীকে আপনি কোন একটি নির্ধারিত ওষুধ দিতে চাইলে, যদি দেখেন সেই ব্যক্তির মধ্যে অন্য ওষুধের লক্ষণ থাকে তখন আপনি কি করবেন?
অন্যপ্যাথির প্রতিরোধক আর হোমিওপ্যাথির প্রতিরোধক ব্যবস্থা একনয়।যাকে প্রতিরোধক ওষুধ দিবেন, কমপক্ষে তার বর্তমান অবস্থা জেনে তাৎক্ষণিক তার সাথে যে ওষুধটি বেশী সাদৃশ, সেই ওষুধটি দিবেন। রোগ প্রতিরোধের শর্ত ব্যক্তিকে সুস্থ্য থাকা।
একটি উদাহরণ দিলে আরও সহজ হবে, যেমন- একজন যুদ্ধা, যুদ্ধের মাঠে অসুস্থ তাকে আপনি সুস্থ্য না করে আরও কিছু যুদ্ধাঅস্ত্র দিলেন, এই যুদ্ধা সুস্থ্য না হলে এই অস্ত্র দিয়ে কি করবেন? এই অসুস্থ যুদ্ধার কাঁধে আরো অস্ত্র চাপিয়ে দিলে, সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আগে তাকে সুস্থ্য করতে হবে, তারপর অস্ত্রদিয়ে সহযোগিতা করবে।
তাই বলছি- যে সকল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রোগীকে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধক চিকিৎসা দিবেন, তখন রোগীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা জেনে নিবেন।সেই সময় চিকিৎসক রোগীর বর্তমান কষ্টের সাদৃশে যে ওষুধটি দিবেন সেটিই রোগীর ঐ সময়ের মহামারীর প্রতিরোধক ওষুধ।
সর্বশেষ কথা, করোনা ভাইরাস নিয়ে অত হতাশার কোন কারণ নেই, রোগী আক্রান্ত হলে বা আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যে লক্ষণ নিয়ে আসবে সে লক্ষণের সাদৃশে ওষুধ দিলে রোগী সুস্থ্য হবে ইনশাআল্লাহ।
করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে যে সব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, তা সাধারণ জনগণের চেয়ে চিকিৎসকরা বেশী মানতে হবে, কারণ চিকিৎসা পেশায় যারা জড়িত তারাই বেশী আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।