করোনা ভাইরাল ডিজিজ তৎসহ চিকিৎসা বিষয়ক কিছু আলোচনা

ডাঃ রবীন বর্মন,
★ ভাইরাস কি?—- ভাইরাস হচ্ছে ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র পরজীবী, যাদের খালি চোখে দেখা যায় না, এরা জীবন্ত প্রাণীদেহের কোষে বাসা বেঁধে তার শরীরে বংশ বিস্তার করে, তার লালা, রক্ত, শরীরের রসে, মিশে যায়, দেখা গেছে এক একটা ভাইরাস এক একটা অর্গানকে আশ্রয়স্থল করে সেই অর্গানকে নষ্ট করে।
কোন কোন ভাইরাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে, বা হাঁচি, কাশি, বা লালাস্রাবের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে অন্য প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে। কোন কোন ভাইরাস প্রশ্বাসের দ্বারা বাইরের হাওয়ায় ঘুরে বেড়াতে পারে, কেউ তা পারে না, কোথাও পড়ে যায়, বা আটকে থাকে।
★ করোনা ভাইরাস কোন ধরনের ভাইরাস ?—-করোনা ভাইরাস বাতাসে ভাসে না, শরীর একটু ভারী বলে কারুর প্রশ্বাস থেকে বাইরে বেরিয়ে কোথাও পড়লে সেখানে আটকে থাকে।
★ করোনা ভাইরাস কি কোন নতুন ভাইরাস?—- না, এটি একটি পুরানো ভাইরাস, ২০০২ সালে এই ভাইরাস চীনে প্রথম ধরা পড়েছিল, জানা গিয়েছিল বাদুরের শরীরে ছিল, সেই বাদুর ধরে খেত বনবিড়ালরা, তারপর সেই সব বনবিড়ালদের মাংস খেয়ে মানুষের মধ্যে রোগটি সংক্রমিত হয়েছিল।
★ সেই সময় এই ভাইরাস থেকে হওয়া রোগের নাম কি দেওয়া হয়েছিল?—- সেই সময় এই ভাইরাস থেকে হওয়া রোগের নাম দেওয়া হয়েছিল– SARS (সার্স)।
★ SARS কেন বলা হয়েছিল?—- সার্স বলা হয়েছিল কারন, এই চারটি ইংরাজী অক্ষর একটি ইংরাজী লাইনের প্রথম ৪টি অক্ষর, যা রোগটির প্রধান লক্ষন, তাই এই নাম দেওয়া হয়েছিল, যাতে রোগের নামের মধ্যেই মূল লক্ষনটা এসে যায়। ভাইরাসগুলি মানুষের শরীরে প্রবেশ করেই তীব্র বা ভীষণভাবে Respirstory distress, অর্থাৎ শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা করায়।
★ কি সেই ইংরাজী লাইনটা? – Severe Acute Respiratory Syndrome, S = severe—- মানে তীব্র, A= acute— ভীষন তাড়াতাড়িতে বাড়াবাড়ি হয়, R= respiratory = শ্বাস প্রশ্বাস সংক্রান্ত, S= syndrome— অনেক লক্ষন।
★ সিমপটম না বলে সিনড্রোম বলছে কেন?—- সিমপটম মানে একটি লক্ষনকে বুঝায়, কিন্তু যখন একটি মূল বা প্রধান লক্ষনের সাথে আরও অনেকগুলি লক্ষন যোগ হয়, তখন সব লক্ষন বা কমপ্লেইনগুলিকে একসাথে সিনড্রোম বলে।
★ এই নাম কারা দেয়?—- এই নাম বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একটি শাখা যারা শুধু রোগ জীবানু বা ভাইরাসের দিকটা দেখে, তারাই দেয়।
★ বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার সেই শাখাকে বা টিমকে কি বলা হয়?—- তাদেরকে বলা হয়–ICTV
★ I C T V র পুরো অর্থ কি? I C T V মানে—International Committee of Taxonomy of Viruses,
★ কিন্তু ভাইরাসটির নাম করোনা দিয়েছিল কেন?—- তাহলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে করোনা (Corona) কাকে বলে? সূর্যের চারিদিকে যে আলোকচছটা বেরোয়, তাকে ইংরাজীতে করোনা বলে (Corona), আমরা সবাই সূর্যের ছবি আঁকার সময় গোলের চারপাশে দাগ দিই সূর্যের আলোক চছটা দেখানোর জন্য। মাইক্রোস্কোপে এই ভাইরাসকে সেইরকম দেখায়—যেন তার শরীরের চারপাশে দাগ দাগ, বা কাঁটা কাঁটা আছে, শুঁয়াপোকার গায়ে যেমন কাঁটা থাকে, বা কাঁকরোল নামে যে তরকারীটা পাওয়া যায় তার বাইরে যেমন হালকা কাঁটা কাঁটা ভাব থাকে ঠিক সেইরকম, বা যারা আমড়া নামক টক ফলটি খেয়েছে তারা জানবে তার গোলাকার বীচিতে যেমন কাঁটা কাঁটা ভাব থাকে, ঠিক সেই রকম দেখতে, তাই সূর্যের করোনার মতন দেখতে বলে একে করোনা ভাইরাস বলা হয়েছিল ।
★ ২০০২ সালের পরে কি পুনরায় এই করোনা ভাইরাস পৃথিবীতে এসেছিলো?—- হ্যাঁ, ১০ বছর পরে ২০১২ সালে আরবে আবার দেখা গিয়েছিল।
★ সেবারেও কি ঐ একই নাম SARS ছিল?—- না, সেবারে কিন্তু ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব আর অন্য কোথাও দেখা যায়নি, কেবলমাত্র আরব ও তার আশেপাশে অর্থাৎ মধ্য এশিয়াতে দেখা গিয়েছিল,
সেবারে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা রোগ লক্ষনগুলিকে একসাথে MARS (মার্স) নাম দিয়েছিলেন,
★ SARS র বদলে সেবারে তারা MARS বলেছিলেন কেন ?—– কারন ঐ যে বললাম–আরব এবং তার আশেপাশে হয়েছিল বলে, জায়গাটা ভৌগলিক হিসাবে মধ্য এশিয়া, তাই MARS (মার্স) বললেন তারা।
★MARS র পুরো অর্থ তাহলে কি?—- Middle East Acute Respiratory Syndrome,
★ সেবারেও কি বনবিড়ালের মাংস থেকে হয়েছিল?—- না, সেবারে জানা গিয়েছিল উটের মাংস থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল।
★ তারপরে আর দেখা গিয়েছিল?—- না, তারপর আর দেখা যায়নি, কিন্তু ২০১৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে চীনের উহান প্রদেশের সামুদ্রিক মাছ বিক্রীর বাজারে পরপর ১ জন, ২ জনের হতে হতে ২৭ জনের ঐ রকম জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ার মতন লক্ষন দেখা দিলো, এরপর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৬০ এ দাঁড়িয়ে গেল, মারা যেতে থাকলো একের পর এক, ভাইরোলজিস্টরা পরীক্ষা করে দেখলেন — সেই করোনা ভাইরাস।
★ কিন্তু এবারে নভল করোনা ভাইরাস বলছে কেন?—- কারন, ভাইরাসটি তার শরীরের শেফ পাল্টিয়েছে, জিনের পরিবর্তন ঘটিয়েছে, তাই নতুন রূপে এসেছে বলে WHO র ICTV দল নাম দিলেন Novel Korona Virus,
★ Novel (নভল), শব্দের মানে কি?—- নভল শব্দের মানে হচ্ছে, নব রূপে, নতুন ভাবে, এখানে যেহেতু ভাইরাসটি শরীরের একটু পরিবর্তন করে অন্যভাবে, অর্থাৎ নতুন রূপে এসেছে, তাই নাম দেওয়া হল— নভল করোনা ভাইরাস, ( Novel korona virus)
★ কোথাও কোথাও লেখা দেখছি কভিড-১৯ (Kovid) KO =Korona, Vi = Viral, d = disease, = Korona Viral disease করোনা ভাইরাল ডিজিজ,
★ অনেকে আবার নভল করোনা ভাইরাস-19 বলছে কেন? ব্যাপারটা বুঝলাম না, —- এটা আর কিছুই নয়, ২০১৯ সালে ধরা পড়েছে তাই,19, i.e. Identified in 2019, কারন, এর রে যদি অন্য সালে অন্যভাবে আবার ভাইরাসটির আগমন হয়, তাহলে তার থেকে পার্থক্য রাখার জন্য এই সালটা বসানো।
★ তাহলে অফিসিয়াল নাম কি এই করোনা ভাইরাসই?—- না, ২০২০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী সেই I C T V, টিম, অর্থাৎ International Committee of Taxonomy of Viruses, অথরিটি এই ভাইরাসের অফিসিয়াল নাম দিলেন– SARS COV–2,
★ SARS COV–2 মানে? (SARS=সার্স) — সার্স মানে আগেই জেনেছেন, (CO=করোনা), (V=ভাইরাস) (2) = এবারের তাই– SARS COV-2,
★ COV –2 বলছে কেন?—- কারন আগে ত একবার এরা এসেছিল, সেবারের আগমনকে 1 ধরে এবারের আগমনকে 2 ধরা হয়েছে, কারন- একই বদমায়েসরা চরিত্র পাল্টেই ত অন্যরূপে এসেছে, এবং আরও বেশী বাড়াবাড়ি ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত প্রবলেম তৈরী করছে।
★ এত দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়াচ্ছে কেন?—- কারন, আজকাল প্লেনে একদেশ থেকে আরেক দেশে লোকজন সব সময় যাতায়াত করছে বলে বিভিন্ন দেশে দ্রুতবেগে দুর্ধর্ষ এই ছোঁয়াচে ভাইরাসরা মানুষের প্রশ্বাসের মাধ্যমে পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, যেটা প্রাচীনকালে এক দেশ থেকে অন্য দেশে এত দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম না থাকায় সম্ভব হত না।
★ প্যানডেমিক বলছে কেন?—-পৃথিবীব্যাপী রোগ ছড়ালে তাকে প্যানডেমিক বলে, Pan= all, সর্বত্র, পৃথিবীব্যাপী, তাই WHO, বিশ্বসংস্থা মার্চের ১১ তারিখ এই SARS COV –2 কে প্যানডেমিক এপিডেমিক রোগ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
★ এই রোগে কেউ আক্রান্ত হচ্ছে কিনা কি করে বুঝা যাবে?—– প্রাথমিক লক্ষণগুলি হচ্ছে —
সাধারণ জ্বরের মতন—* জ্বর টানা চলতে থাকে,* সর্দি-কাশি থাকে,* কাশি সাধারনত শুকনো, বেশী ঘড়ঘড়ে নয়,* গা হাত পা ব্যথা এবং তার সাথে শরীরে একটা ম্যাজমেজে ভাব,* মাথার যন্ত্রনা
—-এই পর্যন্ত মোটামুটি সব সাধারণ জ্বর সর্দি কাশিতে থাকে, কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে এর সাথে যোগ হয় একটি বিশেষ লক্ষন, যেটি সাধারণ জ্বর- সর্দি- কাশি থেকে করোনাকে পার্থক্য করে।
★ কি সেই বিশিষ্ট লক্ষনটি?—– শ্বাসকষ্ট, রোগীর শ্বাসকষ্ট আরম্ভ হয়, দম নিতে কষ্ট হয়, আস্তে আস্তে সেই কষ্ট বাড়তে থাকে, কারণ রোগীর ফুসফুস দুইটি নষ্ট হতে থাকে, অর্থাৎ ফাইব্রোজড হতে আরম্ভ করে, অর্থাৎ আস্তে আস্তে অকেজো হতে অারম্ভ করে, ফলে দম নিতে পারে না, দম নিতে ছাড়তে ভীষণ কষ্ট হয়, মনে হয় সে যেন অতল জলে তলিয়ে যাচ্ছে, অক্সিজেন পাচ্ছে না, এর সাথে আর একটি সিমপটম প্রকাশ পেতে আরম্ভ করে, তা হল– রোগী কোন খাদ্যদ্রব্যের গন্ধ ও স্বাদ ঠিকমতন পায় না, এই অনুভূতিগুলি কমতে থাকে, কারন–ফেসিয়াল নার্ভের শাখাগুলি এ্যাফেক্ট হওয়ার দরুন এই সব অনুভূতিতে বাধার সৃষ্টি হয়।
★ এই রোগ এত দ্রুত ছড়ায় কি করে?—-এই রোগ ছড়ায় বা ছড়াচ্ছে মাত্র একটা ভাবেই— Man to Man, মানুষ থেকে মানুষের মাধ্যমে। যেমন:
১) হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে—- এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের মধ্যে বা নাকের মধ্যে এই ভাইরাস ভর্তি হয়ে থাকে। তাই সে যখন হাঁচি বা কাশি দেয়, তার মুখের বা নাকের থেকে এই ভাইরাস গুলি ছিটকে বেরিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, পরীক্ষা করে দেখা গেছে 1 মিটার অর্থাৎ তিন ফুটের মতন দূরত্ব পর্যন্ত ভাইরাসগুলি ছিটকে যেতে পারে, তার বেশী দূরে সাধারণত যেতে পারে না, তবে কোন ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতেই পারে।
তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির এক মিটারের মধ্যে অর্থাৎ তিন বা সাড়ে তিন ফুটের মধ্যে যদি কোন লোক থাকে এবং সেই আক্রান্ত ব্যক্তি যদি হাঁচি বা কাশি দেয়, তাহলে তার চারপাশে যারা থাকবে অবধারিতভাবে তারা আক্রান্ত হবেই।
২) আক্রান্ত ব্যক্তির হাতের মাধ্যমে—- আক্রান্ত ব্যক্তির নাকে, মুখে ভাইরাস ভরে থাকে আগেই বলেছি, তাই হাঁচি, কাশি দেওয়া বাদেও সে যদি নাকে মুখে হাত দেয়, বা হাঁচি কাশির সময় যদি মুখের সামনে হাত দিয়ে হাঁচে বা কাশে — যেটা সবাই করে থাকে, তাহলে তার হাত দুটি অসংখ্য ভাইরাসে ভরে যায়, এবং সেই হাত দিয়ে সে যেখানে যে জিনিস ধরবে, সেই সব জায়গা ভাইরাসে ভরে যাবে।
আমি কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি,—- সে ব্যাগের হাতল ধরলে, দরজার তালা চাবি ধরলে, আলমারির হ্যান্ডেল ধরলে, কোলাপসিবল গেটের হ্যান্ডেল ধরে টানলে, সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময় পাশের রেলিং ধরলে, অন্যের মোবাইল ধরলে সেই মোবাইলের গায়ে, ইত্যাদি জায়গায় এই ভাইরাস ভরে যাবে, আর তার পরে ঐ সব জায়গায় যে বা যারা হাত দেবে, বা সংস্পর্শে আসবে, টুক করে ভাইরাসগুলো তার হাতে চলে যাবে এবং সেই হাত যখনই সে মুখে, চোখে, বা নাকে লাগাবে তখনই তার শরীরে ভাইরাস ঢুকে যাবে, অর্থাৎ সে আক্রান্ত হয়ে যাবে।
যেমন— আমাদের চলতে-ফিরতে, কথা বলতে, যে কোন কাজ করার ফাঁকে আমাদের হাত প্রায় সময়ই নাকে, মুখে, বা চোখের কোনে আমাদের অজান্তেই চলে যায়।লক্ষ্য করে দেখবেন নাকে, মুখে বা কানের দিকে হাত না লাগিয়ে একজন মানুষ ২/৩ মিনিটের বেশী থাকতে পারে না।এইভাবে দ্রুতগতিতে এই রোগটি একজন আক্রান্ত ব্যক্তির কেবলমাত্র হাতের ছোঁয়ার মাধ্যমে অশ্বমেধের ঘোঁড়ার দৌড়ানোর মতন ছড়াতে থাকে।
৩) উপরে বলা দুটি মাধ্যমের দ্বারা, অর্থাৎ হাঁচি বা কাশির মাধ্যম, এবং হাতের মাধ্যমে রোগ ছড়াচ্ছে আমরা জানলাম। কিন্তু যখন ঐ ভাবে কারুর শরীরে যখন ভাইরাস ঢুকে যায়, সে কিন্তু জানে না, বুঝতে পারে না। কেন বুঝতে পারে না — কারণ— কোন রোগীর ভিতরে ভাইরাস ঢুকে গেলেও
সে কিন্তু জানতে পারছে না যে তার নাক বা মুখ দিয়ে একটা করোনা ভাইরাস ঢোকার পরে তার গলার কাছে বংশবৃদ্ধি হয়ে নাকের এবং মুখের মধ্যে এখন করোনা ভাইরাসের পাহাড় জমে আছে। কারণ তার শরীরে ত এখন সিমপটমস দেখা দেবে না, তার শরীরে সিমপটমস দেখা দিতে বেশ কয়েক দিন লাগবে। সিমটমস ফুটে উঠতে পারে বা দেখা দিতে পারে সে সংক্রমিত হওয়ার ২ দিন পরে, বা ৩ দিন পরে, বা ৪ দিন পরে, বা ৫ দিন পরে, ব ৬ দিন পরে, বা ৮ দিন পরে, বা ১০দিন পরে, বা ১২ দিন পরে, বা ১৪ দিনের মাথায়। মোটামুটি দেখা গেছে ১৪ দিনের মধ্যে তার শরীরে যাবতীয় সিমপটমস ফুটে উঠবে বা দেখা দেবে।
তাহলে ব্যাপারটা হচ্ছে—- ১৪ দিনের আগে যে কোন দিন তার শরীরে সিমপটমস ফুটে উঠতে পারে, আবার এর মধ্যে সিমপটমস না ফুটে একেবারে ১৪ দিনের মাথায়ও ফুটে উঠতে পারে।
মনে করা যাক, এই একটি লোকের ১৪ দিনের মাথায় করোনা ভাইরাল ডিজিজের সব শারীরিক সিম্পটমসগুলি ফুটে উঠলো, কিন্তু এই ১৪ দিন তো সে এই ভাইরাসের ধারক ও বাহক ছিল, তার নাকের এবং মুখের মধ্যে করোনা ভাইরাস হাজারে হাজারে ভরে ছিল, এবং সে যেখানে হাঁচি দিয়েছে, যেখানে কাশি দিয়েছে, যেখানে থুথু বা কফ ফেলেছে, তার নাকে মুখে হাত দেওয়ার পরে সেই হাত দিয়ে যেখানে যেখানে যা যা ধরেছে, সব জায়গাতেই ভাইরাস ছড়িয়েছে। আবার তার হাতের ছোঁয়ার সেই সব জিনিস যারা যারা ধরেছে বা স্পর্শ করেছে, তারা সবাই করোনা ভাইরাসের অাধার হয়ে গেল। মানে তারা কেউ বুঝতে পারলো না, কিন্তু সবাই ভাইরাস ছড়াতে থাকলো। এইভাবে এক থেকে ১০০, ১০০ থেকে ১,০০০, ১,০০০ থেকে ১০,০০০ লোকের মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকলো ।
★ যেদিন একজন মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢুকলো বা ঢোকে— তার ২ দিন পরে, বা ৪ দিন পরে, বা ৬ দিন পরে, বা ৮ দিন পরে বা ১৪ দিন পরে তার শরীরের রোগের সিমপটমস ফুটে উঠতে পারে বলছেন, এইরকম হয় কেন, ব্যাপারটা কি? একই ভাইরাস যখন, তখন একই রকম সময়ে, সবার শরীরে সিমপটমস ফুটে উঠা উচিত বলে ত মনে হয়, —- যেদিন একজন মানুষের শরীরে রোগের জীবানু বা ভাইরাস ঢোকে বা প্রবেশ করে, তারপরে এক একটি রোগের জীবানু বা ভাইরাস এক এক রকম সময়ের মধ্যে সিমপটমস প্রকাশ করে । এটা এক একটা রোগের ক্ষেত্রে এক এক রকম,
আবার একটা রোগের ক্ষেত্রে প্রতিটি আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও আলাদা হয়। এই রোগ বীজ অর্থাৎ ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস, ইত্যাদি একজনের শরীরে ঢোকার পর থেকে যতদিন না কোন সিমপটমস ফুটিয়ে তুলছে- মাঝখানকার এই সময়টাকে ডাক্তারী ভাষায় বলা হয়– ইনকিউবেশন পিরিয়ড।
★ কেন সিমপটমস ফুটে উঠার দিনের এমন তারতম্য হয়? অর্থাৎ ইনকিউবেশন পিরিয়ডের ভ্যারিয়েশন হয়?—- কারন,
১) এক একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস মানব শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গুছিয়ে তার সংসার পেতে অর্থাৎ সব কায়দাকানুন শেষ করে তার শরীর থেকে টকসিন বা বিষাক্ত পদার্থ মানুষের রক্তে ঢেলে দেওয়ার পরে, এবং শরীরের কোষ বা অর্গান নষ্ট করে সেই সব কোষের বা অর্গানের, বা সিস্টেমের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হতে আরম্ভ হলে তখনই বাহ্যিক সিমপটমসগুলি দেখা দেয় বা প্রকাশ পায়।
সুতরাং ইনকিউবেশন পিরিয়ড হচ্ছে মানুষের শরীরে রোগবীজ ঢোকার পর থেকে সেই সব রোগবীজ, অর্থাৎ ব্যাকটিরিয়া ভাইরাসরা যতদিন নীরবে থাকে, মানুষকে ক্ষতি করার প্রস্তুতিপর্ব নিতে থাকে, ততদিন ।
★ ইনকিউবেশন পিরিয়ডের ভ্যারিয়েশন শুধু জীবানু ভাইরাস বলে নয়, জীবানু ভাইরাস ছাড়াও অন্য রোগের ক্ষেত্রেও হতে পারে। যদিও ইনকিউবেশন পিরিয়ড শব্দটা ইরফেকসাস ডিজিজদের ক্ষেত্রেই বেশী ব্যবহৃত হয়, এইসব ক্ষেত্রে History of present illness লাইনটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
★ এক একটি ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড এক এক রকম হয় কেন?—— কারন কোন ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে তার শরীর নিঃসৃত টকসিন বা টকসিক পদার্থ, বা বিষ কতটা একজন মানুষের শরীরে ঢেলে দেবে তার উপরে ইনকিউবেশন পিরিয়ড নির্ভর করে। তাই– কলেরার জীবানুর মানব শরীর অভ্যন্তরে রোগ লক্ষন তৈরী করার সময় এক রকম সময় লাগে, টাইফয়েড ব্যাসিলাসের এক রকম সময় লাগে, আবার করোনা ভাইরাসের এক রকম সময় লাগে।
★ ইনকিইবেশন পিরিয়ড ২–৫ দিন, বা ৩ থেকে ১০ দিন, বা ১ থেকে ১৪ দিন —- এই রকম বলার কারনটা কি?—– কারন ঐ রোগের জীবানু বা ভাইরাসগুলি শরীরের মধ্যে বিষ ঢেলে প্রতিক্রিয়া করার পরে ঐ পিরিয়ডের মধ্যে যে কোন দিন মানুষটার শরীরে রোগ লক্ষন ফুটে উঠতে পারে, যেমন — করোনা ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড ২ থেকে ১৪ দিন।
★ একই এলাকা, একই পাড়া, একই বাড়ী, ধরা যাক — একই সাথে সবার নাক দিয়ে কভিড ভাইরাস ঢুকেছে, তাহলেও রোগ লক্ষন প্রকাশ, এক এক জনের এক এক রকম তারিখে হচ্ছে কেন?-
কারন–প্রত্যেকের শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা এক রকম নয়, ব্যাপারটা প্রত্যেকের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বা ইমিউনিটির উপরে নির্ভর করে, অর্থাৎ কার শরীর ভাইরাসগুলির সাথে কতটা টক্কর দিয়ে তাকে আটকে রাখতে পারে –তার উপরে নির্ভর করে।
কারুর হয়ত জীবনী শক্তি খুব দূর্বল– তাকে হয়ত ৩ দিনের মাথায় ভাইরাসরা কাবু করে ফেললো, কারুর ৭ দিনের মাথায়, কারুর ১০ দিনের মাথায়, আবার কারুর শরীরের জীবনী শক্তি, অর্থাৎ সেই ইমিউনিটি এত ভাল বা মজবুত যে সে হয়ত ১৪ দিন পর্যন্ত সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করে টক্কর দিয়ে রাখছিলো, অর্থাৎ খেলাটাকে ড্র করে রাখছিলো, কিন্তু ১৪ দিনের মাথায় গোল খেয়ে গেল।
★ শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা, যাকে ইমিউনিটি, বা জীবনী শক্তি, যাই বলা হোক না কেন — দেহে বা শরীরে রোগ আক্রমনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, এই জন্যই হোমিওপ্যাথিতে রোগের নাম ধরে চিকিৎসা না করে রোগীর চিকিৎসা করা হয়, মানুষটার জীবনীশক্তিকে বাড়ানোর জন্য,জীবনী শক্তিকে উদবুদ্ধ করার জন্য চিকিৎসা করা হয়, বলা হয়— Treat the patient, not the disease, আমার শরীরের দারোয়ানকে শক্তিশালী করতে হবে, সেই চোরকে তাড়াবে, (দারোয়ান= জীবনী শক্তি), আর চোর= বাইরের রোগ শক্তি, তাই আমরা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা বিশ্বাস করি —চিকিৎসা যা করতে হবে তা মানুষটার লক্ষন সমষ্টি নিয়ে তাকেই করতে হবে। বাইরের রোগ শক্তি আমাদের শরীরের জীবনী শক্তির দূর্বলতা পেলে কেবলমাত্র তখনই প্রবেশ করতে পারে, নতুবা নয়।
★ তাহলে এই ইমিউনিটি, বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কি ঔষধ খাবো, একটা ঔষধের নাম বলে দিন,—- কোন নির্দিষ্ট ঔষধ খেলে ইমিউনিটি বাড়বে, বা শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়বে, বা জীবনী শক্তি মজবুত হবে —- এমন কোন অালাদা ঔষধ হয় না।
★ তাহলে কিভাবে বাড়বে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা?—- দৈনন্দিন সভ্য, ভদ্র ও সংযত জীবন যাপন, সঠিক খাদ্যাভাস, প্রাত্যহিক ব্যায়াম, পরিমিত বিশ্রাম, রুটিন জীবন , পর্যাপ্ত ঘুম, ইত্যাদি বাড়ায় একজন মানুষের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা।
★ একটু গুছিয়ে পয়েন্টওয়াইজ বললে সব মানুষের বুঝতে এবং মনে রাখতে সু্বিধা হতো, —- তাহলে শুনুন,
১) রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে হবে এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে,
২) প্রত্যহ সকালে মুক্ত আবহাওয়ায় একটু হাঁটার অভ্যাস করতে হবে, জোরে জোরে হাঁটলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে, তাছাড়া আমাদের ফুসফুসের মধ্যে যে ছোট ছোট বেলুন থাকে, নাম– লাংস এ্যালভিওলাই, জোরে জোরে হাঁটলে সেগুলির মধ্যে ঠিকমতন বাতাস ঢোকা বেরুনোর কাজ হয়, ফলে তারা শক্তিশালী হয়, চট করে ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ ধরতে পারে না,
৩) প্রত্যহ সকালে, বা দিনের যে কোন সময়ে অল্প সময়ের জন্য হলেও ফ্রি হ্যান্ড এক্সসারসাইজ এবং দুই একটি যোগ ব্যায়াম করতে হবে,
৪) খাবার দাবারের ব্যাপারে মানতে হবে কিছু নিয়ম—- মনে রাখতে হবে —” খাওয়ার জন্য বাঁচা নয়, বাঁচার জন্য খাওয়া “,
* দুপুরে খাওয়ার পরে কিছু সিজনাল অর্থাৎ মরশুমী ফল খেতে হবে, যেমন—- আপেল, পেয়ারা, আঙুর, মুসুম্বি বা কমলা, শশা, ইত্যাদি,
অনেকে বাচ্চাদেরকে আপেল, নাসপাতি, ইত্যাদি ফল সেদ্ধ করে খাওয়ান, তাতে সব ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়, তা খাওয়ানো গোবর খাওয়ানোর সমান হয়ে দাঁড়ায়,
* কাঁচা আমলকী যখনই পাবেন, তখনই খাবেন, মনে রাখতে হবে–একটা আপেলে আছে ৫০ I U ভিটামিন সি, একটি পেয়ারায় ২৫০ I U ভিটামিন সি, এবং একটি কাঁচা আমলকীতে থাকে ১৫০০ I U ভিটামিন সি,
* গরুর মাংস শূকরের মাংস, এবং রেওয়াজি খাসির মাংস, এবং বড় বড় তৈলাক্ত মাছ কম খেতে হবে,
* ইলিশ মাছ, পমফ্রেট মাছ, বা সমুদ্রের অন্যান্য মাছ বেশী খেতে হবে,
* ফল, তরকারী , মাছ, মাংস যতটা সম্ভব টাটকা খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, একদিন এক গাদা কিনে ৭ দিন ধরে ফ্রিজে রেখে খেলে সেই সব খাদ্যদ্রব্যের গুণগত মান অনেক কমে যায়,
* ফ্রিজের ঠান্ডা জল, ঠান্ডা আইসক্রীম কম খেতে হবে,
* মাইক্রোওভেনে খাবার গরম না করে হিটারে বা অন্যভাবে গরম করতে হবে, মাইক্রোওভেনে গরম করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর,
* টাটকা সবুজ শাক সবজি প্রচুর পরিমানে খেতে হবে,
আজকাল শাক সবজিতে প্রচুর পরিমানে ইনসেক্টিসাইডস বা বিষ ব্যবহার হয়, তাই যে কোন শাক বা সবজি রান্নার আগে ২/৪ ঘন্টা লবন জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ভাল করে ধুয়ে তবে কাটতে হবে।
* ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৩ লিটার জল খেতে হবে ,
* রান্নায় তেল কম খেতে হবে, সরষের তেল এবং সাদা তেল সম পরিমানে নিজে বাড়ীতে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে,
* দুবেলা খাওয়ার শেষে বাড়ীর তৈরী চিনি ছাড়া টক দই খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে,
* দোকান বা রেষ্টুরেন্টের খাবার, সব রকম তেলে ভাজা, চপ, কাটলেট, মোগলাই পরটা, দোকানের কষা মাংস, দোকানের বিরিয়ানি, ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো,
* দুধ এবং চিনি ছাড়া গ্রীন টি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে,
* কফি পান, মদ্যপান, এবং ধূমপান— এই তিন পান থেকে বিরত থাকতে হবে,
* চিনি খাওয়া খুবই ক্ষতিকর, মাথায় রেখে চিনি বর্জন করতে হবে ,
* লোকাল যে কোন মাছ — টাটকা খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে,
* কোয়াশ, লাউ, ঝিঙা, পেঁপে, কাঁচা টমেটো, বীনস, করলা, ক্যাপসিকাম, কাঁচাকলা, ইত্যাদি,উপকারী তরকারী জানতে হবে ,
৫) প্রত্যহ সকালে সম্ভব হলে শরীরের সামনে পিছনে ১০ মিনিট রৌদ্র বা সান হিট লাগাতে হবে,
৬) ঠান্ডা জল সহ্য না হলে জোর করে ঠান্ডা জলে স্নান করা যাবে না, হালকা গরম জলে সারা বছর স্নান করতে হবে,
৭) ঘরের মধ্যে সকালে বা বিকালে যদি একটু রৌদ্র প্রবেশ করে, তাহলে খুবই ভাল হয়, তাই সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে,
৮) বেশীরভাগ সময় ঘরের দরজা জানালা খুলে রাখার চেষ্টা করতে হবে, ঘর যেন বদ্ধ না থাকে, অনেক ঘরকুনো লোক জানালা দরজা সব বন্ধ করে বদ্ধ ঘরে থাকতে চায়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকারক, এই সব ঘরে নানা রকম রোগ জীবানু বাসা বাঁধে,
৯) মডার্ণ জীবনে মানুষ বড় বেশী A C র ভক্ত হয়েছে, কিন্তু A C, অত্যন্ত ক্ষতিকারক,
A C ঘর বদ্ধ হওয়ার জন্য বহু রোগ জীবানুদের বাসা বাঁধতে সুবিধা হয়,পরিষ্কার বিশুদ্ধ হাওয়া পাওয়া যায় না, যা সু-স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, খোলা দরজা জানালায় ক্রশ ভেন্টিলেশন হয় — তাতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায় এবং ঘরে ফ্রেস অক্সিজেন ঢুকতে সাহায্য করে, ঘরের মেঝেতেও কার্পেটের থেকে প্লেন মেঝে ভালো, প্লেন মেঝে রোজ ভেজা কাপড় দিয়ে মোছা যায়, তাতে ঘর অনেক জীবানু মুক্ত থাকে ফলে স্বাস্থ্যসম্মত হয় ।
১০) আপাতভাবে সুস্থ থাকলেও বছরে ৩/৪ বার ব্লাড সুগার, লিপিড প্রফাইল, এবং T S H টেষ্ট করতে হবে,
১১) সুযোগ থাকলে প্রত্যহ অন্তত ১৫ মিনিট সাঁতার কাটতে পারলে যথেষ্ট ভাল হয় ,
১২) কথায় কথায় এ্যালোপ্যাথিক নানা রকম ঔষধ না খাওয়াই উচিত, সামান্য জ্বর হলেই প্যারাসিটামল, কোথাও সামান্য ব্যথা হলেই পেইন কিলার, শরীরের যে কোন অসস্তি হলেই গ্যাসের চাপ দিচ্ছে বলে গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়া,
১৩) সারাদিন মোবাইল আর ল্যাপটপ চালিয়ে শরীরের মধ্যে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বেড়ে গিয়ে ২/১ দিন ঘুমের একটু সমস্যা হওয়ায় স্লিপিং পিলস আরম্ভ করা, ইত্যাদি, শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমায়,
তাই, কোন ঔষধ নয়, সুসভ্য জীবনযাপন, ও খাদ্যাভ্যাসে শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে,
★ লকডাউন যদি উঠে যায় এবং আমাদেরকে বাইরে চলাফেরা করতে হয় তখনও কি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে? —–অবশ্যই থাকতে পারে, যতদিন না কনফার্মড বা নিশ্চিত হওয়া যাবে নতুন করে কারুর করোনা ভাইরাল ডিজিজ হচ্ছে না, ততদিন এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই, কারণ দেশের সব মানুষকে ধরে ধরে তার করোনা ভাইরাস আছে কি না—- তা চেক করা হচ্ছে না ; যেটা করা হয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। উত্তর কোরিয়ায় কোন লক-ডাউন করা হয়নি, সারা দেশে একদিনেই কারুর শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়েছে, এবং যে কয়জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে তাদের হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। কিন্তু সেটা অল্প সংখ্যক লোকের দেশ বলেই সম্ভব হয়েছে । আমাদের মতন এই বিশাল দেশে তা সম্ভব নয়।
★ তাহলে লকডাউন উঠে গেলেও যদি বাইরে বেরুতে হয়, কিভাবে চলাফেরা করবো বা কাজকর্ম করবো, বা কি ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করবো? —-অতি সাবধানতার সাথে চলাফেরা করতে হবে, বা কাজকর্ম করতে হবে। যে সব নিয়মগুলি অবশ্যই পালনীয় তা জানাচছি —
১) সব সময় 3-4 ফুট দূর থেকে মানুষের সাথে লেন-দেন করার, বা কথাবার্তা বলার চেষ্টা করতে হবে,
২) হঠাৎ হঠাৎ নাকে, মুখে, বা চোখে হাত দেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে ,
৩) বাইরে ঘোরা বা কাজকর্ম করা যেতে পারে, কিন্তু পকেটে একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল অবশ্যই রাখতে হবে, এবং কোথাও কোন জিনিসের সাথে ডাইরেক্ট কন্টাক্ট হলে পকেট থেকে স্যানিটাইজারের বোতলটা বের করে হাত দুটি ওয়াশ করতে হবে, অর্থাৎ ধুয়ে ফেলতে হবে।
কোলাপসিবল গেটের, বাসের বা ট্রেনের হ্যান্ডেল ধরলে, ফ্লাট বাড়ীর কমন তালা খুললে বা লাগালে, ইত্যাদির পরে পকেট থেকে বা ব্যাগ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বের করে দুইটি হাতের সামনে পিছনে ভালো করে মুছে নিতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের গায়ের লেখা দেখতে হবে —-কমপক্ষে 60 পার্সেন্ট এ্যালকোহল থাকতে হবে । আমি বর্তমানে একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি — তাতে ৭০% এ্যালকোহল আছে, নীচে ছবি দিলাম, দেখে নেবেন।
৪) যেখানে প্রচুর লোক সমাগম হবে, যাকে বলা হয় মাস গ্যাদারিং, সে সব জায়গা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৫) মাস্ক ব্যবহার করলে, বাইরে থেকে বাড়ীতে এসে কাপড় কাচা ক্ষার সাবান বা কার্বলিক এ্যাসিড সাবান যেমন– লাইফ বয় সাবান দিয়ে ধুয়ে রোদে দিতে হবে ,
৬) কারো সাথে হ্যান্ডশেক বা করমর্দন করবেন না
★ করোনা ভাইরাস ডিজিজ হওয়া মানেই কি অবধারিত মৃত্যু?—- না মোটেই তা নয়, হাম, পকস, চিকোনগুনিয়া , ডেঙ্গু, প্রভৃতি রোগের মত এটিও একটি ছোঁয়াচে জীবানুঘটিত রোগ। পার্থক্য এটাই—-এই ভাইরাস অতি দ্রুত বংশ বিস্তার করে, এবং ভাইরাসগুলি অতি তাড়াতাড়ি ফুসফুসে চলে যায় এবং ফুসফুস নষ্ট করতে থাকে। তবে ঠিকমতন চিকিৎসা হলে বহু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন তা সবাই খবরে পড়ছেন এবং দেখছেন।
আগেই বলেছিলাম– কার শরীরে এই ভাইরাসটা কতটা এফেক্ট করবে, তা নির্ভর করবে একজনের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বা ইমিউনিটির উপরে। সাধারণত বাচ্চাদের এবং বৃদ্ধদের শরীরে ইমিউনিটি কম থাকে। কিন্তু করোনা ভাইরাস দেখা যাচ্ছে ৫০ উর্ধো বয়স্কদের বা বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে আরোগ্যলাভে বেশী বাধার সৃষ্টি করছে।
স্ট্যাটিস্টিকস বলছে যাদের আগের থেকে ডায়াবেটিস ছিল, হাইপারটেনশন বা বেশী ব্লাড প্রেসার ছিল, শ্বাসকষ্ট ছিল, বা রিনাল ফেলিওর ছিল — ডায়ালেসিস চলতো, বা ক্যান্সারে, বা অন্য কোন বড় অসুখে ভুগছিল, তাদের করোনা ভাইরাস অ্যাটাক করলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশী।
কারণ — অনেকদিন ধরে অসুখে ভুগে এবং নানারকম ঔষধ খেয়ে তাদের শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে গেছে, তাদের জীবনীশক্তি খুবই দুর্বল হয়ে আছে, কিম্বা যারা প্রচুর পরিমাণে এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খেয়ে এসেছে, ফলে শরীরটা ড্রাগ রেসিসট্যান্স হয়ে আছে, অন্য কোন ঔষধ চট করে ধরতে চাইছে না, তাদের করোনা ভাইরাস আক্রমনে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশী।
★ বাইরে কিভাবে চলতে হবে বললেন, বাড়ীতে কিভাবে চলতে হবে যদি দয়া করে বলেন—–আগেই কিছু কিছু বলেছি,
১) ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখা যাবে না, জানালা খোলা রাখতে হবে, ঘরে যেন বিশুদ্ধ হাওয়া প্রবাহিত হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । যে ঘরে প্রতিনিয়ত ফ্রেস অক্সিজেন ঢুকবে আর কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যাবে, আরও সোনায় সোহাগা হবে সকালে বা বিকালে যদি একটু সূর্যের আলো বা তাপ ঢুকতে পারে, সেই ঘরে রোগ জীবানু কম বাসা বাঁধতে পারে, কোন ঘরে যদি ক্রশ ভেন্টিলেশন থাকে তবে তা আরও ভাল ও স্বাস্থ্যসম্মত ঘর হতে পারে।
ক্রশ ভেন্টিলেশন কি জিনিস?—-ক্রশ ভেন্টিলেশন হচ্ছে অপোজিট ডাইরেকশনে যদি জানালা রাখা যায়, যেমন– ঘরের দক্ষিন দিকের দেয়ালের যে পজিসনে জানালা, উত্তর দিকের দেয়ালে সেই একই পজিসনে জানালা রাখলে বা থাকলে, ফ্রেস অক্সিজিনেটেড হাওয়া একদিকের জানালা দিয়ে ঢুকে, ঘরের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে, অন্যদিকের জানালা দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইডযুক্ত হাওয়া বের করে দেবে।
অনেকে যারা দেশলাই খাপের মতন দুই রুমের ফ্লাট বাড়ীতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের এসব শুনে দুঃখের হাসি পাবে, মনে মনে বলবে—- মশাই, একটা জানালা ছিল তাও ফ্রিজ, আলমারী রাখতে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেল, আপনি আবার ক্রশ ভেন্টিলেশন বলছেন!
২) এসি মেশিন থাকলে তা বন্ধ রাখতে হবে, এসি চালানো ঘরে ভাইরাসরা বেশী দিন বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকতে পারে। কারন, ঘর সব সময় বদ্ধ থাকে, আর বদ্ধ ঘরে সব সময় রোগ-জীবাণু বৃদ্ধির প্রবণতাও বেশী থাকে। এসি প্রীতি আমাদের আধুনিক সভ্যতার একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সত্যি কথা বলতে কি—এসি ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা থাকার জন্য অনেক বাচ্চা ও বৃদ্ধদের সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, সারা বছর লেগেই থাকে, অন্য রোগ জীবানুও বৃদ্ধি পায়।
আসলে —সভ্যতার খাতিরে, ভদ্রতার খাতিরে, সামাজিকতার খাতিরে, পারিপার্শ্বিকতার খাতিরে আমরা আজ এমন অনেক কিছু করতে বাধ্য হচ্ছি, যা পরে আমাদেরকে সহজে ছেড়ে দিচ্ছে না,
৩) ঘরে কার্পেট না থেকে যদি প্লেন মেঝে হয় এবং রোজ জল, কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা যায়, তাতে রোগ জীবানু কম বাসা বাঁধতে পারে, ফলে ঘর বাড়ী স্বাস্থ্য সম্পন্ন হয়,
৪) অনেক লোকে বাড়ীতে আসতে চাইলেও যেভাবেই হোক এ্যাভয়েড করতে হবে, নিতান্তই কেউ আসলে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে হবে, এবং সে চলে গেলে তার বসার জায়গা বা তার ধরার জিনিস ডিসইনফেকট্যান্ট করতে হবে,
৫) বদ্ধ ঘরে ধূপ জ্বালিয়ে বসে থাকা চলবে না, এটা খুবই ক্ষতিকর ব্যাপার, স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশাল ক্ষতিকর, এই বিষাক্ত ধোঁয়া বদ্ধ ঘর থেকে বেরুতে না পেরে শ্বাসের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে ফুসফুসের অনিষ্ট করে, ফুসফুসকে দূর্বল করে দেয়, বহু ফুসফুসের বা গলার ক্যান্সার এই রকম বদ্ধ ঘরে ধূপ জ্বালিয়ে তার মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে সৃষ্টি হয়েছে, এমন উদাহরণ আছে,
★ সর্দি, কাশি, জ্বর থাকলে পরীক্ষার জন্য তাকে নিয়ে যে কোয়ারেনটাইন সেন্টারে রাখছে শুনছি, ব্যাপারটা কি? ——কোয়ারেনটাইন মানে হচ্ছে, কাউকে যে রোগের জন্য সন্দেহ বা সাসপেক্ট করা হচ্ছে, তাকে সেই রোগের ইনকিউবেশন পিরিয়ড পর্যন্ত আলাদা জায়গায় রেখে অপেক্ষা করা এবং দেখা — রোগের লক্ষনগুলি সত্যিই ফুটে বেরুচ্ছে কি না,
সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হলো— আজ যে ইটালীতে করোনার মৃত্যু মিছিল সব থেকে বেশী, কোয়ারেনটাইন শব্দটি কিন্তু সেই ইটালীর কোয়ারেন্টো শব্দ থেকে এসেছে। কোয়ারেন্টো শব্দের অর্থ হচ্ছে চল্লিশ,
চৌদ্দ শতকে ইতালির বাণিজ্য জাহাজগুলি বাইরে থেকে তাদের ভেনিস বন্দরে আসলে দেখা যেত আরোহীরা অনেকেই এক অজানা রোগে আক্রান্ত হতো, (প্লেগ রোগে) , কিন্তু অনেকের তীরে নামার সময় কোন রোগ লক্ষন দেখা যেত না, পরে সিমপটমস প্রকাশ পেত। (কারন তখন তারা রোগটির ইনকিউবেশন পিরিয়ডে থাকতো) । তাই নগর কতৃপক্ষ ঠিক করে দিয়েছিল যে কোন জাহাজ বাইরে থেকে আসলে তাকে পাশের কোন দ্বীপে, বা সমুদ্রের মাঝখানে 40 দিন ( কোয়ারেন্টো), নোঙর করে থাকতে হবে, তারপর আরোহীরা জাহাজ থেকে অবতরণ করবে। ব্যাস, তখন থেকেই চালু হল কোয়ারেন্টো, এবং পরে কোয়ারেন্টাইন শব্দ, অর্থাত আলাদাকরণ।
বর্তমানে প্রতিটি রোগের ইনকিউবেশন পিরিয়ড জানা গেছে, তাই চৌদ্দশ সালের মতন আন্দাজে আজকাল ৪০ দিন কাউকে আটকে রাখা হয় না, যে রোগের যে কয় দিন ইনকিউবেশন পিরিয়ড, সেই দিন পর্যন্ত আলাদা রেখে দেখা হয় সেই রোগটির সিমপটমস ফুটে উঠছে কি না, অবশ্য তার সাথে অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষাও চলতে থাকে ।
★ কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশন শব্দ দুটি কি এক?—– মোটামুটি ভাবে বলা যেতে পারে এক, কোয়ারেনটাইনে রাখা মানে আলাদা রাখা হয় হাসপাতাল কতৃপক্ষ দ্বারা, বা সরকারী নির্দেশনাসারে, কিন্তু আইলোসেন মানে আলাদা রাখা হয়, বা থাকা হয় যে কোন জায়গায়, এমনকি, নিজের বাড়ীতেও থাকা ।
★ আমার যদি জ্বর সর্দি-কাশি ইত্যাদি চলে, পরীক্ষা হয় নি, তবু যদি মনে করি— আমার শরীরের মধ্যে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে , তবে আমার থেকে যেন আরও দশটা মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস না ছড়ায়, তার জন্য আমি কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি ?—- আপনি যদি মনে করেন আপনার শরীরে এই ভাইরাস থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু যাতে অন্যদের মধ্যে আপনার থেকে রোগটি না ছড়ায় তার জন্য আপনাকে করতে হবে —-
১) কারুর সাথে হ্যান্ডশেক করবেন না ,
২) কাশবার সময় যে কোন হাতের বাহুর সামনে মুখ রেখে কাশবেন, যাতে ভাইরাসরা বেশীদূর ছড়াতে না পারে, কি ভাবে কাশতে হবে,
৩) বাড়িতে আলাদা ঘরে আইলোসনে থাকবেন,
৪) যেখানে সেখানে থুথু বা কফ ফেলবেন না,
৫) জনসমাগম, বা জনবহুল জায়গায় যাবেন না,
৬) সব সময় মাস্ক ব্যবহার করবেন,
কারণ এই ভাইরাস যেন বেশী মানুষের মধ্যে না ছড়ায়, তা আটকানোর প্রধান টেকনিকটা হলো—–কাটিং ডাউন দ্য চেইন অব ট্রান্সমিশন, সেই নিয়মটা আপনাকে পালন করার চেষ্টা করতে হবে।