ডাঃ হাসান মির্জা সম্পর্কে আলোচনা

-ডা. রবিন বর্মন
বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন জুনিয়র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক আমাকে বেশ কয়েকবার বালীর হাসান ডাক্তার সম্বন্ধে লিখতে অনুরোধ করেছিলেন, তাই আজ লিখতে বসলাম।
তার পুরো নাম হাসান মির্জা, তিনি কোন অথেনটিক হোমিওপ্যাথিক কলেজে পড়েন নি , কিন্তু আগে পশ্চিমবঙ্গের হোমিওপ্যাথিক কাউন্সিল হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিসনার্সদের একটা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিতেন, ঐ পদ্ধতিতেই তিনি একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন।
1930 সালে, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উলুবেরিয়ার কাছে নিমদিঘি গ্রামে তার জন্ম হয়েছিল। তার পিতার নাম ছিল মাওলানা তাহের মির্জা। তার পিতা একজন ধর্মভীরু মুসলমান ছিলেন। তার পিতার ছিল খুবই সাধারণ একটা ব্যবসা — হোগলা পাতার, যে পাতা কুঁড়েঘরের চালে লাগানো হয়। দোকানটা ছিলো তাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরের ঠিক বিপরীতে গঙ্গার পশ্চিম পাশে বালী গ্রামে, বালী হল্ট স্টেশনের নিকট।
ছাত্র জীবনে ডাক্তার হাসান অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন, কোন বিষয় তিনি যখন মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করতেন, তখন ডাকলেও তার সাড়া পাওয়া যেত না, এতই গভীর মনঃসংযোগ বা আত্মিকভাবে তিনি সেই বিষয়ের ভিতরে ঢুকে যেতেন।
আমাদের রেপার্টরীর রুবরিক হচ্ছে — Absorbed in thoughts, তিনি বাল্যে একজন দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবেও খুবই পরিচিত হয়েছিলেন, ১৯৪৭ সাল, হাসান মির্জার বয়স তখন সতেরো, এই সময় তাদের নিমদীঘি গ্রামে দেখা দিয়েছিল মহামারী রূপে ম্যালেরিয়া । দলে দলে আক্রান্ত মানুষ মারা যেতে লাগলেন। ধর্মপ্রাণ তাহের মির্জা নিজে রোগাক্রান্ত মৃত মানুষদের জন্য গণকবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
কিন্তু দঃখের বিষয়, কয়েকদিন পরে তারই পুত্র এই হাসান মির্জা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলেন। তখনকার দিনের অ্যালোপ্যাথি, টোটকা, তাবিজ, কবজ, সবই চললেও হাসানের অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকলো। সব চিকিৎসা ব্যর্থ হওয়ার পরে তার পিতা একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং হোমিওপ্যাথিক ঔষধের গুণেই হাসান সুস্থ হলেন।
এই ঘটনা হাসানের চিন্তারাজ্যে ভাবান্তর ঘটালো– অন্য অনেকের মতন। হোমিওপ্যাথির বড়ির মধ্যে কি এমন ক্ষমতা আছে যা তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনলো? যা কোন চিকিৎসাব্যবস্থা পারলো না? জানার জন্য তার মন বড় ব্যাকুল হলো। তার বড় দাদা ছিলেন একজন গ্রামীন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। হাসান তার দাদার থেকে মেটিরিয়া মেডিকা বই নিয়ে পড়তে থাকলেন।
পরবর্তীতে হাসান মির্জা নিজের জীবনী প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছেন —-” হোমিওপ্যাথিতে কি আছে আমাকে জানতেই হবে, এই নেশায় আমার নতুন পথ চলা শুরু হয় । স্কুলের পাঠ্য পুস্তকের চেয়ে মেটিরিয়া মেডিকা পড়াতেই আমার আগ্রহ ও ধ্যান-জ্ঞান বেশী হয়। আমার বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী অনেকেই আমাকে উপহাস করে বলতো– বড় ডাক্তার হবে ব্যাটা! সমালোচনাকে গ্রাহ্য করিনি আমি “।
১৯৫০ সাল, কিছু কিছু জায়গায় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা আরম্ভ হয়েছে। মির্জা ফ্যামিলির অনেকেই ঢাকায় পাড়ি দিলেন। তাহের মির্জা কিন্তু গেলেন না। সে তার পুত্রদের নিয়ে কয়েক পুরুষের মাটি আঁকড়ে পড়ে রইলেন নিমদিঘি গ্রামে ।
হাসানের বয়স কুড়ি বছর। মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিলো, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তার সে পরীক্ষা আর দেওয়া হয়ে উঠে নি। বাবার বালীর হোগলার ছোট দোকানে তাকে বসতে হলো।
কিন্তু দোকানে বসে থাকা মানেই তার হোমিওপ্যাথি বই পড়া। ফুটবলের প্রতি নেশা চলে গেল, মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়া হলো না, যুবকের নেশা এখন দাদার কাছ থেকে কেন্ট, ন্যাস, বোরিক, ফ্যারিংটন, ইত্যাদি বই আনা আর মনোযোগ দিয়ে পড়া।
তখন রবিবার করে হোমিওপ্যাথির উপরে ক্লাস হতো শিয়ালদহের কাছে শাঁখারীটোলায়– বেঙ্গল এ্যালেন নামের প্রাইভেট হোমিওপ্যাথিক কলেজে। এখানে রবিবারের ক্লাসে ভর্তি হলেন হাসান ।
এমন সময় তার জীবনে এলো এক অভিনব সুযোগ। একদিনের ঘটনা, দোকানে খরিদ্দার নেই, ফ্যারিংটনের ক্লিনিক্যাল মেটিরিয়া মেডিকা বইটি তিনি এক মনে মনোযোগ সহকারে পড়ছিলেন। একজন খরিদ্দার তার পাশেই এসে দাঁড়িয়ে আছন প্রায় ৫ মিনিট, কিন্তু তার সেদিকে কোন চোখই গেল না। খরিদ্দারটির বয়স প্রায় ৭০ র কাছাকাছি। ভদ্রলোক ভাবলেন — একজন হোগলার ব্যবসায়ী যুবক বইয়ের পাতায় এভাবে ডুবে আছেন, কি এমন বই? তার চোখে পড়লো ফ্যারিংটনের লেখা ক্লিনিকাল মেটিরিয়া মেডিকা। ভদ্রলোক বেশ অবাক হলেন। জিজ্ঞাসা করলেন– তোমার হোমিওপ্যাথিতে খুব আগ্রহ আছে নাকি? লাজুক যুবক জানালেন– হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন ।
এই ভদ্রলোকের নাম ডাঃ মতিলাল মুখার্জি। মতিলাল মুখার্জী যুবককে দেখেই বুঝে ছিলেন — এ এক প্রতিভাবান যুবক। তিনি একটু সাধু টাইপের মানুষ ছিলেন, কাছেই উত্তরপাড়ায় ছিলো তার চেম্বার ও একটি আশ্রম । দুই জায়গাতেই তিনি চিকিৎসা করতেন, তাই হাসান কে বললেন —-তোমার যখন হোমিওপ্যাথি এত ভালো লাগে, সময় পেলে তুমি আমার চেম্বার এবং আশ্রমে এসো।
হাসান মির্জা তার পিতাকে খুবই সম্মান করতেন এবং সব ব্যাপারে তার মত নিতেন, তাই জানালেন মতিলাল মুখার্জির কথা।
বললেন –নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তার কথা। ভবিষ্যতে তিনি একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হতে চান। তার পিতা মতিলাল ডাক্তারের কথা ভালো করেই জানতেন, তাই তিনি পুত্রকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।
অনেক জুনিয়র হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শিক্ষার্থীদের দেখি যারা চেম্বারে শিখতে আসে, তারা অনেকেই —-এটা কেন, ওটা দিলেন না কেন, এটা দিলে কি হতো, রোগী দেখার মাঝখানে এইরকম বিসদৃশ অবস্থা সৃষ্টি করেন যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত, এবং তার ভদ্রতার পরিচয় বহন করে না। নিয়ম হলো— প্রশ্ন থাকলে লিখে রাখতে হবে এবং পরে জিজ্ঞাসা করতে হবে, কিম্বা আমি নিজে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো বাড়িতে গিয়ে বইপত্র ঘেঁটে, কিন্তু তা না করে চেম্বারে এমন ব্যবহার করতে থাকে যা আমার কাছে খুব অস্বস্তিকর ও পীড়াদায়ক হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে আবার আমাকে ডিঙিয়ে একটার পর একটা প্রশ্ন রোগীকে করতে থাকে, এসব তাদের অত্যন্ত অসভ্যতা ছাড়া আর কি বা বলা যায় ? সময় নষ্ট হয়, আমি ঠুঁটো জগন্নাথের মতন বসে থাকি। সে আবোলতাবোল প্রশ্ন করেই যায়। হাসান মির্জার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে এইসব জুনিয়র চিকিৎসকদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
কারণ, সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মতিলালবাবুর চেয়ারের পিছনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন হাসান, শুধু দেখতেন এবং দেখে শেখার চেষ্টা করতেন। দীর্ঘ আট বছর ধরে চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতেন অথচ কোন কিছু জিজ্ঞাসা করতেন না দেখে শেষে একদিন মতিলালবাবুই তাকে বলেছিলেন, তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো, তোমার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে জিজ্ঞাসা করো, লজ্জা করো না। মতিলাল মুখার্জির দুই চেম্বারে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে হাসান মির্জা যাতায়াত করলেন, তারপর ঐ হোগলার দোকানে হোগলার ব্যবসা তুলে দিয়ে তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেন্টার শুরু করলেন।
রাজনৈতিক নেতারা গুরুর কথা ভুলে যায়, আমাদের অনেক ছাত্রও আমাদের কাছে বহুদিন থাকার পরে আমাদেরকে ভুলে যান, কিন্তু ভোলেন নি হাসান মির্জা৷ তিনি তার চেম্বারের নাম দিলেন তার শিক্ষাগুরুর নামে, —-মতিলাল হোমিও ক্লিনিক, যা তার চরিত্রের মহানুভবতা প্রকাশ করে।

এবারে চিকিৎসক হাসান মির্জার কথা বলবো,
কেমন ছিল তার চিকিৎসা পদ্ধতি? কোন মেথডে চিকিৎসা করতেন তিনি?
চিকিৎসক হাসান মির্জার চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে সর্বত্র অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, আমাদের অনেকেরই তার চিকিৎসার ধরন পছন্দ হয়নি, পছন্দ করতামও না, তার করা প্রেসক্রিপশন আমাদের বোধগম্যও হত না, কিন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনেকের অনেক দূরারোগ্য রোগ সেরেছে, আবার আমাদের অনেকের অনারোগ্য রোগীর লিষ্টের মতন তার দেখা বহু রোগীর কোন উন্নতি হয় নি এমনও আছে।
কি ছিলো তার চিকিৎসার পদ্ধতি?
* তিনি কখনও কোন মাদার টিংচার দিতেন না,
* টনিক, পেটেন্ট দিতেন না ,
* বায়োকেমিক ট্যাবলেট দিতেন না,
* প্রত্যেকবার দুইটি করে ঔষধ দিলেও পলি প্রেসক্রাইবার বলা যাবে না, কারন একসাথে দুইটি ঔষধ অল্টারনেটলি খেতে দিতেন না, সেই হিসাবে সিঙ্গেল প্রেসক্রাইবার ছিলেন,
কিন্তু তিনি কেস টেকিং করতেন না, সিমপটমস এ্যানালিসিস এ্যান্ড এভালুয়েশান করতেন না, কোনটি ঔষধের দ্বারা আরোগ্যের কেস নয়, অপারেশন করতেই হবে, সেসব বিচার করতেন না, তিনি পায়ের নখ দেখে আর তার অবজার্ভেশনের উপরেই ঔষধ সিলেকশন করতেন, বলা যেতে পারে অন্য অনেকের মতন তিনিও হোমিও চিকিৎসার একটা নতুন ঘরানা তৈরী করেছিলেন, আর তাই অামি বেশ কয়েকবার তার চেম্বারে গেলেও আমার মন ভরেনি,

আমার মনে প্রশ্ন ছিল অনেক, যা আজও অনেকের মনে নিশ্চয় জাগবে, তবে তিনি নিজেই তার চিকিৎসার পদ্ধতিটি তৈরী করেছিলেন, না কি তার গুরু মতিলাল সাহেবের ফর্মুলা তা আমি জানি না,
তিনি ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে বলতেন পায়ের বুড়ো আঙুলটা দেখাও, তিনি নখটা দেখতে চাইতেন, এবং নখ দেখার উপরে মনে হয়– রোগীর মায়াজম সিলেকশন করে সেই মায়াজমের মেইন ঔষধ সিলেকশন করতেন, যেমন—
মেডোরিনাম, সিফিলিনাম, ব্যাসিলিনাম, থুজা, নেট্রাম সালফ, লাইকোপোডিয়াম, এই রকম কয়েকটা ঔষধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো তার বেশীরভাগ প্রেসক্রিপশন,
আমরা যা পড়েছি—
সোরার নখ– এবড়ো, খেবড়ো, বা একটু ডিফর্মড হতে পারে,
সাইকোসিস—- ভেঙে যায়, বা ভঙ্গুর,
সিফিলিস — একটু চকচকে, গ্লেজি,
—– এর উপরেই কি তিনি মায়াজম সিলেকশন করতেন?
আমি কয়েকবার গেলেও তাকে অবশ্য জিজ্ঞাসা করি নি,
তবে এটা ঘটনা, নখ দেখার সাথে সাথে আর ২/১ টি প্রশ্ন ইচ্ছা হলে করতেন, বা না করেই তিনি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ২ টি এ্যান্টি মায়াজমেটিক ঔষধ দিতেন, অর্থাৎ মায়াজমকেই তিনি তার চিকিৎসার ধ্রুবতারা করেছিলেন,
মায়াজমই যে তার ধ্যান-জ্ঞান ছিল, তা তার নিজের কথায় বোঝা যায়—
তিনি এক জায়গায় বলেছেন—
” রাস্তা দিয়ে কোন অসুস্থ মানুষকে যেতে দেখলে সে সোরা, না সাইকোসিস, না সিফিলিস, আমি তাকে দেখে শ্রেণীবিভাগ করে ফেলতাম “।
আমার বা আমাদের অনেকেরই মনের প্রশ্ন—-
১) একটা মায়াজমের অনেক ঔষধ থাকলেও সবথেকে উল্লেখযোগ্য বলে ১ টি বা ২ টি পলিক্রেষ্ট এ্যান্টি মায়াজমেটিক ঔষধ কিভাবে বা কেন সিলেকশন করবো? সেটাই যে একমাত্র সঠিক তাও বা জানবো কি করে?
২) অর্গাননের ২৪৮ সূত্র অনুযায়ী যখন মনে করা হবে প্রথম ঔষধের কাজ শেষ হয়েছে, তখনই অন্য একটি ঔষধের প্রয়োজন, তা সে কমপ্লিমেন্টারী হোক, বা কগনেটই হোক,
কিন্তু হাসান সাহেব একটি ডীপ এ্যাকটিং এ্যান্টি- মায়াজমেটিক উচ্চ শক্তির ঔষধ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই অন্য একটি ডীপ এ্যাকটিং এ্যান্টি মায়াজমেটিক উচ্চ শক্তির ঔষধ কিভাবে খেতে দিতেন বা বলতেন, তা আমাদের বোধগম্য হয় নি, এবং হ্যানিমানের অর্গাননের পরিপন্থী ত বটেই,
কারন— তার সব প্রেসক্রিপশনেই ২ টি করে ডীপ এ্যাকটিং এ্যান্টি মায়াজমেটিক ঔষধ থাকতো। যেমন— 1) Bacillinum 2) Lycopodium
1নং শেষ হলেই কোন গ্যাপ না দিয়েই বা পূর্ববর্তী ঔষধের কার্যকারিতা বিন্দুমাত্র অনুধাবন না করেই 2নং চালু করার কথা বলা হতো,
আমরা যারা অর্গানন পড়েছি, বা জানি, বা মানি, তাদের কাছে এটা জাস্টিফায়েড ব্যাপার নয়,
2 নং ঔষধটি কি প্লাসিবো ছিলো বা থাকতো? তাহলে হয়ত ট্রু হ্যানিমানিয়ান সেন্সে আমাদের কারুর কিছু বলার ছিল না, বা থাকতো না। কিন্তু, বহুবার, তার বহু প্রেসক্রিপশন ভাল করে ফলো করে দেখেছি, না— প্লাসিবো নয়, সেটা সব সময় অন্য একটা ডীপ এ্যাকটিং মায়াজমেটিক ঔষধই থাকতো।
সুতরাং এটা আমাদের অনেকেরই পছন্দ হয় নি, আমরা মানতে পারি না, কোন ক্লাসিকাল হোমিওপ্যাথদের পক্ষে মানা সম্ভবও নয়,
৩) একটা ছোট কাঁচের শিশিতে ২০ নং বড়িতে তিনি ঔষধ দিতেন, প্রত্যহ একবার করে খেলেও তা শেষ হতে ২০/২৫ দিন যেতো।
প্রশ্ন এখানেও, তাহলে তো থুজা, ব্যাসিলিনাম, লাইকো, মেডো, সিফিলিনাম, যে সব ডীপ এ্যাকটিং ঔষধ তিনি একটি শিশিতে দিতেন, তার ডোজ ২০/২৫ টি হয়ে যেতো, এত গুলি ডোজ তো নিঃসন্দেহে সমর্থনযোগ্য ছিল না, তারপরেই আবার অন্য একটি ঔষধের ডোজও ঠিক তার পরেই অনুরূপভাবে ২০/২৫ টি পড়তো, ব্যাপারটি আমাদেরকে ভাবিয়েছিলো, এবং অর্গানন মোতাবেক আমাদের সমর্থন পায় না,
৪) রোগীর কিছু না দেখলে, না শুনলে, তার ইনভেস্টিগেশনস না দেখলে, তার আসল সমস্যা বা রোগ জানবো কি করে?
নখ দেখে একটা এ্যান্টি মায়াজমেটিক ঔষধ দিলাম বটে, কিন্তু আমি তো জানতে পারলাম না —-
* রোগী হয়ত এসেছিল গল ব্লাডারে ২০ মিমি পাথর নিয়ে, যেটা শুনলে বা জানলে বলতে পারতাম— ঔষধে তোমার পাথর যাবে না, তোমাকে অপারেশন করতেই হবে,
* রোগী হয়ত এসেছিল — তার জরায়ুর ১ কেজি ওজনের টিউমার নিয়ে, কিন্তু আমি তার কিছু শুনলাম না, জানলাম না, তার কোন রিপোর্ট দেখলাম না, শুধু নখ দেখে থুজা বা মেডোরিনাম দিলে তো তার টিউমার অপসারন হবে না, জানতে পারলে বা শুনলে তাকে অপারেশন করতে বলতে পারতাম, হয়তো দেখা গেল —
আমাকে দেবতা জ্ঞানে, আমার দেওয়া থুজা বা মেডোরিনাম সে দিনের পর দিন খেয়ে শেষে বেশী দেরী হওয়ার জন্য তার জরায়ুর প্রথম স্টেজের টিউমারটি চতুর্থ স্টেজে চলে গেছে, যার জন্য আমি দায়ী থাকলাম, আর আমাদের সবার ক্ষেত্রেই কমবেশী যা আলোচনা হয়, তাই হবে, যেমন—- হাসানকেও দেখালাম, কিছু হলো না, বা, হসপিটালের সার্জেনের কথা — একে তো হোমোপ্যাতি করে শেষ করে এনেছেন!
৫) প্রচুর রোগী দেখার জন্য তিনি প্রতি রোগীতে গড়ে এক মিনিটের বেশী সময় দিতে পারতেন না, এতে সব ক্ষেত্রে না হলেও বহু ক্ষেত্রে প্রকৃত চিকিৎসা হয় না বলেই আমাদের ধারণা।
বহু রোগ যা কোনরকম শারীরিক সমস্যার জন্য নয়, সাইকো সোমাটিক, তার জন্য রোগীকে পাঁচ মিনিট সময় দিয়ে, তাকে আশ্বাসবানী, বা মনে অভয় দিয়ে, বা যুক্তি, তর্ক দিয়ে বোঝানো ছাড়া সারানো সম্ভব নয় বলেই মনোবিদদের বক্তব্য, আমাদের প্রাকটিকাল অভিজ্ঞতাও তাই বলে।
তাই রোগীকে এক মিনিট সময় দিলে তা কি করে সম্ভব?
এসব কথা বলা বা আলোচনা করা মানে তাকে কোন অসম্মান করা হচ্ছে, তা নয়, এসব বিজ্ঞানভিত্তিক, গঠনমূলক আলোচনা, এর আগেও অনেকবার কলকাতার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের মধ্যে আলোচিত হয়েছে, এসব তার অর্গাননের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ডোজ বা রিপিটিশন, ইত্যাদি কন্ট্রাকডিকসন হওয়ার বাস্তবধর্মী আলোচনা, তবে মানুষ হিসাবে তিনি অনেক বড় ছিলেন, সেটা পরের পর্বে আলোচনা করবো।
তাই তার চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আমার বা আমাদের অনেকের মনে এই সব প্রশ্ন অন্যায়, বা অস্বাভাবিক তো কিছু নয়, অনেক জটিল রোগী তার হাতে আরোগ্য হয়েছে এটা যেমন ঠিক, আবার অনেক কেস আমাদের সবার যেমন হয়, আরোগ্য হয় নি, তাও ঠিক।
ডাঃ হাসান মির্জার মেটিরিয়ায় জ্ঞাণ ছিল অপরিসীম, আমি কাছে থেকে দেখেছি ফ্যারিংটনের মেটিরিয়ার অধিকাংশ জায়গা তার প্রায় মুখস্থ ছিলো, তিনি কোন হোমিওপ্যাথিক কলেজে পড়েন নি, মাধ্যমিক পরীক্ষাও দেন নি, কিন্তু অসম্ভব মেধাবী ছিলেন, আজকাল একটা বি এ পাশ ছেলে ২ লাইন ইংরাজীতে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না, অথচ হাসান সাহেবকে দেখেছি ফ্যারিংটনের ইংরাজী মেটিরিয়ার অনেক ঔষধের অনেক লাইন রোগী দেখাকালীন গড়গড় করে ইংরাজীতে বলে দিতেন।
অনেকের মতন তিনি ক্লাসিকাল পদ্ধতিতে অনেক সময় নিয়ে কেস টেকিং করে রোগী দেখতেন না,
তিনি নখ দেখে, মুখের দিকে তাকিয়ে তার নিজস্ব স্টাইলে প্রেসক্রিপশন করেছেন, অনেকে উপকার পেয়েছেন, সুস্থ হয়েছেন, অনেকে উপকার পান নি, সুস্থ হন নি।
সব কেস যদি তিনি সুস্থ করতে পারতেন, তাহলে —- পৃথিবীতে এমন ডাক্তার পাওয়া গেছে যে সব রোগ সারাতে পারছেন, এমন মর্মে তার খবর পেপারে বেরুতো, দেশের কিছু পুরস্কার যেমন— পদ্মশ্রী, পদ্মবিভূষণ, ভারত রত্ন ইত্যাদি পেতেন, কিম্বা নোবেল কমিটিতে নাম যেতো এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসামান্য সাফল্যের জন্য নোবেলও পেতেন।
কিন্তু না, সে সব কিছুই হয় নি, তিনি নিজস্ব স্টাইলে প্রাকটিস করেছেন, প্রচুর রোগী দেখেছেন।
প্রচু্র রোগী হওয়ার কারন- শুধু ভাল চিকিৎসক হওয়া নয়, তিনি ফিজ খুবই কম নিতেন তাই।
আমি যখন ছাত্রাবস্থায় প্রথম তার কাছে যাই ১৯৭৬ সালে, তখন উনি নিতেন ৪ টাকা, পরে ৩০ টাকাতে তুলেছিলেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই এত কম টাকা হলে যে কোন ক্ষেত্রেই লোকে পরীক্ষা করতেই বেশী যায়, এবং খুব কাজ না পেলে, বা কিছু বুঝতে না পারলে অনেকে পরে আর কন্টিনিউও করে না।
এটা শুধু চিকিৎসা নয়, সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমরা হামেশাই শুনি, যে কোন ব্যাপারে লোকে বলে— আরে মাত্র ত এই কটা টাকা একবার দেখি না!
আর একটা জিনিস আমি দেখেছি— যে কোন দিকেই কোন না কোন নির্দিষ্ট মানুষের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়, অথচ সেই একই পদ্ধতিতে, একইভাবে তার ভাইয়ের, তার ছেলে- মেয়ের, বা কোন ফলোয়ার, বা শিষ্যের ক্ষেত্রে কিন্তু তা হয় না।
যেমন— হাসান সাহেবের একই ফর্মুলার, একই গদের চিকিৎসা হলেও তার কোন পুত্র, বা গলাবাজি করছে যারা তার “ছয় দশকের ” বই পড়া চ্যালারা, কেউ উনার মতন ক্রেজ করতে পারে নি, তারা চেম্বারে দিনে ৩০০ রোগী আনাতেও পারে নি, বা উনার মতন নাম বা যশের অধিকারীও হতে পারে নি।
ডাঃ প্রশান্ত ব্যানার্জী ( পি ব্যানার্জী), নামে পরেশ ব্যানার্জীর মেজ ছেলে যে ক্রেজ ও অর্থ করে গেছেন, তা তার অন্য কোন ভাইরা, বা তার ছেলে প্রতীপ ব্যানার্জী, সেই একই বাঁধা ফর্মুলাতে চললেও সেই ক্রেজ কেউ করতে পারে নি।
তাই আমার মনে হয় — কারুর কারুর ভাগ্য প্রসন্নতার কোন একটা ব্যাপার থাকে — হোক সে রাশি, নক্ষত্র, বা ঈশ্বরের আশীর্বাদ, বা পূর্বজন্মের স্বীকৃতি — যে কোন দিক দিয়েই।
রাজনীতিতেও দেখবেন —- কত অপ্রত্যাশিত ঘটনায় কেউ একজন প্রধানমন্ত্রী, বা প্রেসিডেন্ট, ইত্যাদি হয়ে যাচ্ছেন, যা তার হওয়ার কোন কথাই ছিল না, বা যোগ্যতাও নেই।
যাইহোক, হাসান সাহেবের যে কথা বলছিলাম,
তার একটা ইনটিউশন পাওয়ার, বা ক্ষমতা ছিলো, যার দ্বারা হয়ত তিনি রোগীদের চোখ, মুখ দেখে বা নখ দেখে একটা ঔষধের পিকচার পেতেন। তবে সেই পিকচার সব ক্ষেত্রে ফলপ্রসু ছিল কি না, বা হতো কি না, তা আমরা জানি না, কারন — বার্নেট, ঘটক, বোগার, ন্যাশের, এস পি দে, শংকরন, ইত্যাদি হোমিওপ্যাথদের মতন তার বিভিন্ন কেস সারানোর তথ্য সহকারেে কোন এভিডেন্স পুস্তকাকারে তিনি লেখেননি বা দেন নি।

কেমন মানুষ ছিলেন তিনি?
তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ, মানবতাবাদী, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী।
অর্থের প্রতি তার খুব মোহ ছিল না, অত্যন্ত নাম-যশ হওয়া সত্ত্বেও সারা বাংলায় তার একটা ক্রেজ ছড়িয়ে পড়লেও তিনি কখনো তার ফিজ বেশি করেন নি। আমি ১৯৭৬ সালে ৪ টাকা দেখেছি, তারপরে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে দেখেছি।
তার জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত সহজ ও সরল ও অনাড়ম্বর, অতি সাধারণ পাঞ্জাবী, লুঙ্গী, আর চামড়ার চপ্পল পরেই তিনি সারাজীবন চেম্বারে বসেছেন ।
আগেই বলছি, তার স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথের, নজরুলের কবিতার প্যারা বলতে পারতেন, আল্লাহু ও তাঁর রসূলের প্রতি তার ছিল অপরিসীম বিশ্বাস, ভক্তি আর শ্রদ্ধা ।
তিনি নিয়মিত কুরআন, হাদিস পড়তেন, এবং প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সময় কুরআনের কোন না কোন উদ্ধৃতি দিতেন। প্রত্যহ সকালে কুরআন বা হাদীস পড়া ছিল তার নিয়মিত অভ্যাস। নামাজের ব্যাপারে তার ছিল খুবই নিয়মানুবর্তিতা। আজানের শব্দ কানে আসলেই তিনি সব কাজ ফেলে নামাজে চলে যেতেন।
তিনি একবার বলেছিলেন— “আমাদের অজ্ঞ মুসলমানদের মধ্যে টুপি নিয়ে লাঠালাঠি, ফাটাফাটির কথা শুনি, এই সব মুসলমানরা জ্ঞানের অভাবেই টুপি আর কিয়াম নিয়ে ফেতনার সৃষ্টি করে। শরীয়তটা কি গোলটুপি আর লম্বা টুপি নিয়ে? “।
তিনি বলতেন, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করা সবচেয়ে বড় ধর্ম। তিনি বলতেন, ঋনগ্রস্ত মানুষ জান্নাতে যেতে পারে না, যতক্ষণ না ঐ ব্যক্তি ঋনদাতার কাছ থেকে ঋণ মুক্ত হয়ে আসে,
তিনি শিশুদের ভালবাসতেন, বলতেন–শিশুরা এক একটা নক্ষত্র, ওরাই পথহারা পথিকের দিক নির্দেশক, ওদের সত্যিকারের মানবিক শিক্ষায় গড়ে তোলা আমাদের কর্তব্য, অনেক সামাজিক ও রাজনৈতিক বাধা, বিপত্তি অতিক্রম করে তার স্থির সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে ডাঃ হাসান তার পশ্চাদপদ গ্রামের মানুষদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য নিমদীঘিতে একটি হাই মাদ্রাসা স্থাপন করেন, যা তার এক অনন্য কীর্তি।
১৯৫৯ সালে, ২৯ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার বিবাহ করেন, পরবর্তীকালে তার একজন ছাত্রী পঃ মেদিনীপুরের সাহানারা খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন, ১৯৭৯ সালে, ৪৯ বছর বয়সে তিনি মক্কা গমন করেন এবং হজ সম্পাদন করেন। আগেই বলেছি ধার্মিক পিতার সন্তান হিসাবে তিনি বরাবরই খুবই ধার্মিক ছিলেন।
হজে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন— “ডাক্তরী জীবনের শুরু থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, আমার প্রিয় রসুল যে পথে হাঁটতো আমিও সেই পথে হাঁটবো। তার পায়ের ধুলামাখা মরুভূমির বালি সারা গায়ে মাখবো। আল্লাহপাক আমার সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন। জমজমের পানি খেয়ে আমি তৃপ্ত”।
পশুপাখি, উদ্ভিদ জগৎ সব কিছুতেই ছিল তার অপরিসীম ভালবাসা ও অান্তরিকতা ।
তার বাড়ির ছোট্ট বাগানের পেয়ারা একবার টিয়াপাখিরা খাচ্ছিলো দেখে তার ছেলেরা তাড়াতে গেলে তিনি বারণ করেন, বলেন– ওরাও আল্লাহর সৃষ্টি জীব, পেয়ারা ওদের খেতে দাও।
তার বাগানের কিছু টম্যাটো একবার গাছতলায় পড়ে নষ্ট হচ্ছিল দেখে রেগে ছেলেদেরকে বলেছিলেন—
টমাটোগুলিকে এভাবে নষ্ট করছিস, আল্লার কাছে জবাব দিতে পারবো?
একজন ধার্মিক মুসলমান হলেও তার মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের লেশমাত্র ছিল না। তার বহু হিন্দু বন্ধু ছিলো।
পঃ বঙ্গ বিধানসভায় মন্ত্রী হয়েছিলেন, রবীন্দ্র ঘোষ লিখছেন—- “আজ আমি মন্ত্রী হলেও আমাদের দুজনের বন্ধুত্ব একই রকম আছে, কোনদিনও আমাদের দুজনের মতবিরোধ হয় নি। যখন প্রয়োজন হয় দুজনে মিলে সমস্যার সমাধান করি। আমাদের দুজনের মিলন অবিচ্ছেদ্য। ডাক্তার ও আমি একই বৃন্তের দুটি কুসুম —হিন্দু, মুসলমান”।
ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির তিনি খুব ভক্ত ছিলেন, শুধু তার খবর শোনার জন্য তিনি লোক ডেকে তার রেডিওতে তেহেরান সেন্টার ধরার ব্যবস্থা করেছিলেন।
২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইসলামিয়া শাস্ত্র অনুসারে মহাজাগতিক সফরের তৃতীয় ধাপ থেকে তিনি চতুর্থ ধাপে গমন করেছেন ।
মোট কথা— তিনি এক অসাধারণ ভাল, সংযত, ধার্মিক মানুষ ছিলেন, কিন্তু তার সব কিছু আলোচনা করাকালীন তার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির ডোজ ও রিপিটিশন যে সমর্থনযোগ্য নয়, তা অর্গানন ভিত্তিক ছিল না, তা আমি বলবো না?
সারাজীবন আমি যা পড়েছি, যা ফলো করেছি, যা বলেছি, যা বলছি, শেখাচ্ছি, যা হ্যানিম্যান বলেছেন, তা কোথাও কুকুর ডাকবে বলে, সেই আশঙ্কায় বলবো না? আত্মপ্রবঞছনা করবো?
আমার বাড়ীর পাশেই প্রায় ২০ বছর আগে একটি মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে দেখতে হাসান সাহেবকে আনা হয়েছিলো, উনি সেই বাড়ীতে ঢুকেই বলেছিলেন — আমি আগে নামাজ পড়বো, একটু জায়গা দিন,
আমি বলেছিলাম– রোগীর ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে আগে দেখে নেবেন?
উনি বলেছিলেন– এতক্ষন যখন মারা যায় নি, আমি কথা দিচ্ছি, আমার নামাজ পড়া সময়ের মধ্যে রোগী মারা যাবে না।
রোগী মারা যায় নি, পরে ওনার সাথে অনেকক্ষন কথা হয়েছিলো।
আমাকে একদিন রবিবারের সকালে তার বাসায় যেতে বলেছিলেন, গিয়েছিলাম, তার আন্তরিকতার অভাব ছিল না, তিনি মানুষ হিসাবে অনেক বড় মনের ছিলেন, শেষ করার আগে মায়ের থেকে মাসীর খবর বেশী রাখার মনোভাব দেখিয়ে যারা বেশী গর্জন করেছে, আর হুঙ্কার ছেড়েছে, তাদের জন্য বেশী বাক্য ব্যয় না করে শুধু ইংরাজীর লাইনটাই মনে রাখতে চাই— Let the barking dogs to bark